হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i117540-হাতকড়া_ডান্ডাবেড়ি_নিয়েই_মায়ের_জানাজা_সংবিধান_ও_মৌলিক_মানবাধিকারের_পরিপন্থী
বাংলাদেশের জেলা শহর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ালেন প্যারোলে মুক্তি পাওয়া এক আসামী। এঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
ডিসেম্বর ২৩, ২০২২ ২০:০০ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের জেলা শহর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ালেন প্যারোলে মুক্তি পাওয়া এক আসামী। এঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজম। তবে এ সময় তার হাতে হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পড়ানো ছিল। জানাজা পড়া অবস্থায়ও তার শরীর থেকে ওইসব খুলে দেয়নি পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ শুধু নিরাপত্তা প্রহরায় আসামিকে কারাগার থেকে বাড়িতে নিয়ে এবং জানাজা নামাজ শেষে ফেরত দিয়ে গেছে। ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া লাগানো, না লাগানো জেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। এ জন্য পুলিশের কোনো দায় নেই।

তবে জেল সুপার বলেছেন, প্যারোলে মুক্তির আদেশের আবেদনপত্রের পাশে পুলিশ স্কটের দায়িত্বরত এসআই কামাল হোসেন ডান্ডাবেড়ি প্রয়োজন উল্লেখ করে আবেদন করেন। তবে পুলিশ আবেদন না করলেও জেল কোড অনুযায়ী তিনি ডান্ডাবেড়ি লাগাতেন। কারণ জানাজা নামাজ থেকে আসামি উধাও হয়ে গেলে দায়দায়িত্ব জেল কর্তৃপক্ষের ওপরই বর্তাতো। ওই বিবেচনা করেই তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন।

খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে।  এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।  রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান বলেছেন,  এ ঘটনা কেবল অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। আলী আজম কোনো সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি নন বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে বরং তিনি একটি গায়েবি রাজনৈতিক মামলার আসামি। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটাও অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন এ মানবাধিকার কর্মী।

ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, জানাজার সময় তার হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো।

প্যারোলে মুক্তি পাওয়া ছেলেকে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করা সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি এ ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছে সংস্থাটির বিৃবতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানসিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, সাবেক ডিআইজি প্রিজন মেজর (অব) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী রেডিও তেহরানকে বলেন, আসামি কোন প্রকৃতির, দুর্ধর্ষ কিনা, তা পুলিশই নির্ধারণ করে দেয়। কারা কর্তৃপক্ষ বন্দির অপরাধ অনুযায়ী জেলখানার ভেতরে ব্যবস্থা নেয়। সাধারণত প্যারোল সেই আসামিদেরই দেওয়া হয় যারা ভদ্র, মার্জিত এবং যাদের ওপর সরকারের আস্থা থাকে। তবে জঙ্গি পালানোর পর সরকারের সুনাম অনেক ক্ষুণ্ণ হওয়ায় পুলিশ কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এর পরও মানবিক দিকটি বিবেচনায় রেখে জানাজার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তার ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া যেত বলে মনে করেন সাবেক এই ডিআইজি প্রিজন।#

পার্সটুডে/নির/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।