২০২২ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ৫৩২ শিক্ষার্থী, ঢাকায় সর্বোচ্চ!
(last modified Fri, 27 Jan 2023 13:48:24 GMT )
জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ ১৯:৪৮ Asia/Dhaka

কথায় আছে,মানুষ নাকি বাঁচার জন্য ভাসমান খড়কুটোও আঁকড়ে ধরে। তাহলে কেন আত্মহত্যার মতো একটি কাণ্ড অবলীলায় ঘটিয়ে ফেলে সেই মানুষ? মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, এর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। জীবন শেষ করে দেওয়াকে অনেকে সাহসী, আবার অনেকে কাপুরুষোচিত কাজ বলে আখ্যা দেন।

তবে নিরপেক্ষ স্থান থেকে ভেবে দেখার সময় এসেছে-কেন ঘটছে আত্মহত্যা। মোটা দাগে একে সামাজিক অবক্ষয় বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও এই একটিই কি আত্মহত্যার কারণ? সাম্প্রতিক সময়ে অল্পদিনের ব্যবধানে বেশ ক’জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা আমাদের নাড়া দিয়ে গেছে। নিশ্চয়ই কোনো একটা কিছু ঠিকঠাক নেই। কিন্তু কী সেটা? কী সেই কারণ?
করোনা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার এ মিছিলে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে আঁচল  নামক তারুণ্যভিত্তিক একটি সংগঠনের প্রকাশিত সমন্বিত প্রতিবেদন তো ভয়ংকর তথ্য দিচ্ছে।আজ শুক্রবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি বলছে, ২০২২ সালেই সারা দেশে  আত্মহত্যা করেছে  ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ, এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আত্মহত্যা করেছে ৮৬ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ সারা দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫৩২ জন।এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে  ১০৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এদের মাঝে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এদের মাঝে নারী শিক্ষার্থী ২৮৫ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬১ জন। 
সারাদেশের মোট আটটি বিভাগে  আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে যা ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ যা ১৭.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ যা ১৬.৮১ শতাংশ।
পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষণ্ণতা থেকে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এক জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আত্মহত্যা। দেশে দেশে আত্মহত্যার কারণ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, মানসিক দুশ্চিন্তাই আত্মহত্যার একমাত্র কারণ নয়। এর পেছনে কাজ করে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবন ধারণের অবনতির আশঙ্কা। 

স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার চিত্র নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, শিশু কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয়গুলোও তাদেরকে আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সাথে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারেনা। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদেরকে আত্মহত্যার মত বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। 

এ সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানী শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ২০২২ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়সন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরীর কোন বিকল্প নেই।কি কারণে তাদের সংখ্যা গতবছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন,ব্যক্তিগত চাহিদা,,সামাজিক অবস্থান এসকল বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।

স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শিক্ষকরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো শুনে মেন্টরের ভূমিকা পালন করতে পারেন। মনে রাখতে হবে এই বয়সে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক পরামর্শ পাওয়ার জায়গা অপ্রতুল। 

আত্মহত্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য স্কুল-কলেজসহ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ও প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। সচেতন হওয়া দরকার সবার। অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বের হতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। তাই আসুন, আত্মহত্যাকে না বলি। জীবনকে ভালোবাসতে শিখি। #

পার্সটুডে/নিলয়/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।