মার্চ ১২, ২০২৩ ১৮:৪৯ Asia/Dhaka

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান গেটে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশেষে আজ (রোববার) বিকেলে ফিরে গেছেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে প্রধান সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন রাবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এরপরে তারা ফিরে যায়। তবে সোয়া ২টার দিকে আবারও আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। সর্বশেষ সোয়া ৪টার দিকে ফিরে যান অন্দোলনকারীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর বেলা দুইটার দিকে বাসভবনে ফিরেছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা। সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে আলোচনায় বসেছেন ক্যাম্পাসে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আসেন উপাচার্য। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মানতে রাজি হননি। শিক্ষার্থীদের দাবি, যেখানে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরেছে, সেই বিনোদপুরে আলোচনায় বসতে হবে। তাঁরা মিছিল নিয়ে বিনোদপুরে যেতে চান। সঙ্গে উপাচার্যকেও যেতে হবে। একপর্যায়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শাবাশ বাংলাদেশ মাঠের দিকে এলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় মানবঢাল তৈরি করে তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঘটনার পরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শনিবার রাতে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন । স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রশাসনের পদক্ষেপে গাফিলতি ও পুলিশ কর্তৃক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়াসহ মোট ১৭ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। রোববার তারা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ বলেন, পদত্যাগপত্র পেয়েছি। যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের তালিকা পরে জানানো হবে। জানা যায় পদত্যাগকারীদের মধ্যে ৮ জন সহকারী প্রক্টর আর বাকিরা বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা ও হলের প্রাধ্যক্ষসহ আবাসিক শিক্ষক রয়েছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক গণমাধ্যমকে বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমের কোন কোন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অভাবে অনিয়ম হচ্ছে। তাই বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্ষদ থেকে তারা পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া কারণ বলতে না চাইলেও ব্যক্তিগত পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সময় দেয়াকে উল্লেখ করেছেন গণমাধ্যমের কাছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় রাজনীতির চর্চা অনেকটা মুখ্য হয়ে ওঠায় ঘটছে এ ধরনের ঘটনা।

আর বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক মনে করেন, রাজনৈতিক দলদারিত্ব এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মারত্মকভাবে বিস্তৃতি ঘটেছে। যে কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদার শিক্ষকরা এসব দায়িত্ব পালনে সংকটে পড়ছেন। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষার্থীরা আজ হামলার শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে এখন উচ্চ মহলে ভাববার সময় এসেছে বলে মনে করেন এই বাম নেতা।#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ