রংপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ
(last modified Fri, 24 Mar 2023 12:03:18 GMT )
মার্চ ২৪, ২০২৩ ১৮:০৩ Asia/Dhaka

স্যার, শাব্দিক অর্থে জনাব হলেও, বাংলাদেশে ক্ষমতা দাম্ভিকতা আর প্রভুত্বর ইঙ্গিতও বহন করে। একসময় উপমহাদেশের এই বাঙলা অঞ্চলে যারা পাঠ দান করতেন কিংবা নানান ধরনের পাঠশালায় বা বিদ্যাপীঠসমূহে শিক্ষা-দীক্ষা বিতরণের কাজ করতেন তাঁদেরকে ওস্তাদজী , গুরুজী কিংবা পণ্ডিত মশাই ইত্যাদি নামে ডাকা হত।

কি উপায়ে সেই সম্বোধনগুলো বিবর্তিত হয়ে ‘স্যার’ হয়ে গেলো সেটি একটি গবেষণার বিষয়। কেননা ইংরেজদের  বিদ্যাপীঠগুলোতে যারা পাঠ দান করেন তাদেরকে  স্যার বলে সম্বোধন করতে হয় না । সে যাই হোক , ভাবনার বিষয় হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স অর্ধশতক পেরিয়ে গেলেও সেই ‘স্যার’সম্বোধন এর এখনো কোন দেশজ্ রূপ তৈরি হয় নাই ।

ইংরেজিভাষী দেশে অপরিচিত যেকোন ব্যক্তিকে স্যার বলে সম্বোধন করা হয় কিংবা করা যায়। এসব দেশে কাউকে স্যার বলা না বলায় কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি নাই ।  মোট কথা পাশ্চাত্যের মোটা দাগের ফ্ল্যাট সোসাইটিগুলোতে কিংবা সমতার সমাজগুলোতে অপরিচিত সবাই সবাইকে স্যার বলতে পারে। কিন্তু এরা সাধারণত পরিচিত কেউ কাউকে স্যার বলে সম্বোধন করেনা। কারণ ফ্ল্যাট সোসাইটি গুলোতে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে।

কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছে উপনিবেশোত্তর অসমতার কিংবা ভেদাভেদের সমাজে। এরা একদিকে পাশ্চাত্য রীতির অফিস-আদালত কিংবা রাষ্ট্র কাঠামো গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে প্রাচ্যরীতির অসমতার কিংবা ভেদাভেদের সমাজ ব্যবস্থাও টিকিয়ে রেখেছে। এহেন অবস্থায় কালচারাল ক্রাইসিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংকটের যে চিত্রগুলো প্রত্যহ আমরা প্রত্যক্ষ করি তা অপ্রত্যাশিত হলেও অনিবার্য বটে!কারণ অনেকবার স্যার সম্বোধন নিয়ে বাংলাদেশে সরকারি আমলাদের প্রত্যাশার সঙ্গে বিভিন্ন মহলের বাতচিৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে বারংবার।

তবে সম্প্রতি রংপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের আপা না স্যার ডাকা বিষয়ে সৃষ্ট আলোচনায় ইস্যুটি আবারো সামনে এসেছে।

এর আগে রংপুরের জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ-পত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন? তবে জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন।

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সঙ্গে যখন এমন আচরণ করা হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ আর কোথায় থাকে?  বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে এমন উপনিবেশিক আচরণ কোন ভাবেই কাম্য নয়। আর  রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান হাবু বলেন, জেলাপ্রশাসককে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে হবে, এমন নির্দেশনাই দেয়া আছে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে। #

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/২৪

 

ট্যাগ