বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ-কেন্দ্রীক অর্থনীতির ভিত বেশ শক্তিশালী
(last modified Wed, 28 Jun 2023 13:07:13 GMT )
জুন ২৮, ২০২৩ ১৯:০৭ Asia/Dhaka

পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর গড়ে ৫০-৫৫ হাজার কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হয়।

এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম হলো প্রাণী উৎপাদন। মুসলিম বিশ্বে কোরবানির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২২ সালে কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি প্রাণি প্রস্তুত ছিল। কোরবানি হয় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার প্রাণী। একদশক আগেও চাহিদার প্রায় অর্ধেক আমদানি করত বাংলাদেশ।

গত ৪ বছরে কোরবানির জন্য কোনো প্রাণী আমদানি করতে হয়নি। কোরবানির প্রাণীর চাহিদা পূরণে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।কোরবানির প্রাণীর চাহিদা পূরণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। ঈদ সামনে রেখে খামারিরা প্রস্তুতি নেন। সারা দেশে খামারিসহ পশু পালন কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ জড়িত। দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। কোরবানির প্রাণী উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণে ফিড শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া কোরবানির মৌসুমে খড়, ঘাস, গাছের পাতা ও ভুসি ইত্যাদি খাদ্যের ব্যবসা বাজারে ও শহরের অলি-গলিতে জমে উঠে।প্রতি বছর পুরনো হাটের পাশাপাশি কোরবানি উপলক্ষে গড়ে ওঠে অনেক নতুন হাট। শুধু ঢাকা শহরেই দুই সিটি করপোরেশনে বসে প্রায় ৪০টি হাট। পরিচালিত হয় অর্থনৈতিক বিশাল কার্যক্রম।

কোরবানির প্রাণী অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি কোরবানির প্রাণী অনলাইনে বিক্রি হয়, যার আর্থিক মূল্য ছিল ২,৭৩৫ কোটি টাকা। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।কোরবানি উপলক্ষে দুই ধরনের পরিবহনের চাহিদা বেড়ে যায়। তা হলো কোরবানির প্রাণী পরিবহনের জন্য ও ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য। মানুষ গ্রাম থেকে শহরে প্রাণী আনা-নেয়ার জন্য ট্রাক, পিক-আপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের ব্যবহার বেড়ে যায়। কোরবানি উপলক্ষে এই পরিবহনের সাথে জড়িত লোকদের আয় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় পরিবহন খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা বা আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে বলে বিভিন্ন তথ্য বেড়িয়েছে গবেষণায়।

কোরবানিকেন্দ্রিক চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর ১ লাখ টন লবণ প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লবণ শিল্পের সাথে জড়িত। এ সময় মসলা বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য। কোরবানির গোশত সংরক্ষণে বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেশে বছরে ১৪ লাখ ফ্রিজের চাহিদা আছে। বছরের ৩০ শতাংশ ফ্রিজই বিক্রি হয় কোরবানি ঈদে।বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন- বিটিএ এর সহসভাপতি মিজানুর জানান, বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে তার প্রায় ৫০ শতাংশ শুধু কোরবানি থেকে আসে। প্রায় ৬ লাখ মানুষ চামড়াশিল্পে কর্মরত রয়েছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির প্রাণীর চামড়া এই শিল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫শ কোটি টাকার ব্যবসা হয় এই খাতে।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সব ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রথম শ্রেণীর চামড়া ও চামড়াজাত প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। এ শিল্পের অধীনে আছে ট্যানারিসহ, অসংখ্য জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও সুদর্শন সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা। কোরবানির প্রাণীর চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিক্রয় ও ব্যবহার উপলক্ষে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ও প্রতিষ্ঠানের কর্মযোজনা সৃষ্টি হয়। কোরবানির ওপর ভর করেই টিকে আছে উজ্জ্বল সম্ভাবনার এ খাতটি।এসএমই ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আলী জামান বলেন, কোরবানিকেন্দ্রিক সব কার্যক্রমই জিডিপিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুসারে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জিডিপিতে শুধু প্রাণী খামারের অবদান ছিল ১.৭৬%। এ ছাড়া জিডিপিতে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প খাতের অবদানও উল্লেখযোগ্য। #

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ