চিকিৎসা বন্ধ রেখে ধর্মঘট: অধিকার খর্ব করে অনেকটা লাশের রাজনীতির আস্ফালন
(last modified Thu, 20 Jul 2023 12:22:11 GMT )
জুলাই ২০, ২০২৩ ১৮:২২ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে ভুল চিকিৎসায় রোগি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে প্রায়ই। স্বজনদের বিক্ষোভ আন্দোলন এক সময়ে থেমে যায় সব কিছু। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসক গ্রেফতারে আন্দোলনে নামে ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠন। চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে তাদের আন্দোলনে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। যদিও পরে গ্রেফতার দুই চিকিৎসকের জামিন হওয়ায় চলমান ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।

কিন্তু চিকিৎসকদের এধরনের কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, প্রসূতি সেবা বন্ধ রাখা আর সাধারণ জ্বর উঠলে কিছু টেস্ট লিখে দেওয়া এক নয়। চিকিৎসকের মূল কাজ মানবতার সেবা। মানুষের জীবন রক্ষায় অবদান রাখা। কোনোভাবেই রোগীকে মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দেওয়া তাদের কাজ হতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, কোনো চিকিৎসক সংগঠন হুট করে এ ধরনের কর্মসূচি দিতে পারে না। রোগীকে জিম্মি করে এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে সরকারের কাছে দাবি জানানোর সুযোগ ছিল। সেই দাবির অংশ হিসাবে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ে স্মারকলিপি দিতে পারত। কিন্তু এর কোনোটিই না করে সরাসরি চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া দেশের রোগীদের সঙ্গে বেইমানির শামিল।

জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০টি। এর প্রতিটি হাসপাতালে গড়ে ১৫টি করে অস্ত্রোপচার হলেও দিনে প্রায় অর্ধলক্ষের বেশি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে। একইভাবে নিবন্ধিত প্রায় ১৫ হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারেও কয়েক লাখ রোগী চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিয়ে থাকেন। পেশাজীবী চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে দেশের লাখ লাখ রোগীর জরুরি সেবা পড়েছিলো কঠিন ঝুঁকিতে।

সারাদেশে চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার-অপারেশন বন্ধ করে রোগীদের দুর্ভোগে ফেলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব। সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দুইজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের কারণে অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন  বিএমএ) এ ধরণের অমানবিক ও অন্যায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। চিকিৎসক হোক আর যা-ই হোক সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনিভাবে মোকাবেলা করা উচিত। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হীন ষড়যন্ত্রে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া, জনগণের চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক অধিকার খর্ব করার সামিল। এটা অনেকটা লাশের রাজনীতির মতো।

মানুষের জীবন রক্ষায় এবং রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক ও সেবিকাদের ধর্মঘট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ হাইকোর্টে রিট করেছিল মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। সে বিষয়ে জানতে কথা হয় সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফেলতি আর রাজনৈতিকায়নের ফলে অনিয়ন্ত্রিত সব ঘটনা ঘটছে। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে  রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক ও সেবিকাদের ধর্মঘট বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্ট চুড়ান্ত নির্দেশনা দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা  অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের। #

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/বাবুল আখতার/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ