ডেঙ্গু মহামারী: টনক নড়ছে না সরকারের, সচেতনতার বুলি আওড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ
(last modified Tue, 03 Oct 2023 12:29:29 GMT )
অক্টোবর ০৩, ২০২৩ ১৮:২৯ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু জ্বরে এখনও পর্যন্ত মারা গেছে এক হাজারের বেশি। প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯ হাজার ৩৫৭ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর আগে সারা বিশ্বে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে ছিল ব্রাজিল। দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। এবার বিশ্বে ডেঙ্গু সংক্রমণের শীর্ষে থাকা ব্রাজিলকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ রোগে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় মানুষ দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বস্তুত এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিশ্বের কোনো দেশেই অতীতে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু হয়নি, যা এবার হয়েছে বাংলাদেশে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। দেশের আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ডেঙ্গুর ধরন ও উপসর্গ বদলেছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর হচ্ছে। ফলে ৯০ শতাংশ রোগীর প্রাণ যাচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। দিন দিন এ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্য বদলের কারণে ডায়াগনসিসের তাৎক্ষণিক ফলাফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজন-ডেঙ্গু টেস্টে নেগেটিভ ফল, উপসর্গও ডেঙ্গুর মতো নয়; কিন্তু হঠাৎ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ শরীরে রক্তের জলীয় অংশ কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে রোগী শকে চলে যাচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালের পরিচালকডা. মো. খলিলুর রহমানের মতে, ডেঙ্গুতে শক সিনড্রোমে চলে যাওয়া রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো দরকার। এ বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত হাসপাতালে যেতে দেরি হওয়ার কারণেই অনেক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, অব্যবস্থাপনার কারণেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেশি মারা যাচ্ছে। দ্রুত ডেঙ্গুর ধরণ পরিবর্তন হওয়ায় শিশু মৃত্যুও বাড়ছে, বলছে জানান শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। 

এদিকে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিউডেঙ্গা নামের এই ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে নিপ্পন ডটকম।

ডব্লিউএইচও বলছে, তীব্র ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস এমন ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই ভ্যাকসিন চালু করা হবে। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছেই।#

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/৩

ট্যাগ