‘রামপাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় প্রভাবিত’
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i18358-রামপাল_নিয়ে_প্রধানমন্ত্রীর_বক্তব্য_কোম্পানির_বিজ্ঞাপনী_প্রচারণায়_প্রভাবিত’
বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দাবি করেছেন তা ‘কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত’ বলে মন্তব্য করেছে তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ২৭, ২০১৬ ২২:৫৩ Asia/Dhaka
  • ‘রামপাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় প্রভাবিত’

বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দাবি করেছেন তা ‘কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত’ বলে মন্তব্য করেছে তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

আজ (শনিবার) এক বিবৃতিতে কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) রামপাল বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন জানার পর থেকে মানুষের মনে একটু আশার সঞ্চার হয়েছিল যে, তিনি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ বক্তব্য এবং জনমত বিবেচনা করবেন। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার পথ গ্রহণ করবেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত। সে কারণে তাঁর বক্তব্যে অনেক ভুল তথ্য, অতিরঞ্জন আছে।’

জাতীয় কমিটির দাবি, 'গত ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে যেসব প্রচারণা খণ্ডন করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবারও সেগুলোই উচ্চারণ করেছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ, বড়পুকুরিয়ার ক্ষতি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।'

আন্দোলনের খরচ কে যোগান দেয়- প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই আন্দোলন জনগণের গায়ে-গতরে গড়ে তোলা আন্দোলন। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন ভাষা আন্দোলনে মানুষ পয়সা দিয়ে আনতে হয়নি। ষাটের দশকের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে গেছে। পয়সা দিয়ে দালাল আসে, যেমন রামপালের প্রকল্পের পক্ষে প্রচারকরা আছে। এটা খুবই হতাশাজনক যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'একদিকে বিএনপি নেত্রী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সুন্দরবন আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। অন্যদিকে তার বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে কালি মাখানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলি, সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণের ওপর ভর করে এবং সামাজিক দায়বোধ থেকে স্বাধীন ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হিসেবে গত কয়েক দশকে বিকশিত হয়েছে।’

জাতীয় কমিটির আশা, এই আন্দোলনকে কলংকিত না করে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি দায়বোধ থেকে জনগণের স্বার্থ বুঝতে চেষ্টা করে মানুষ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্য এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় কমিটির বিস্তারিত বক্তব্য সোমবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে আরেকটা গণঅভ্যুত্থান হবে: রব

এদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকার যদি রামপাল বন্ধ না করে তাহলে ’৬৯ সালের মত দেশে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হবে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুন্দরবন রক্ষা কর, পরিবেশ বাঁচাও, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না ও জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তি চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। নাগরিক ঐক্য এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “দেশের ৯০ ভাগ মানুষ রামপালে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। যাচাই করতে গণভোট দিন সরকারের বিশেষজ্ঞদের মতের পক্ষে ১০ ভাগ ভোটও পড়বে না। তবে ভোটার থাকবে বাড়িতে আর ভোট উড়ে এসে বাক্সে পড়লে চলবে না। এই ভোট হতে হবে স্বচ্ছ।”

তিনি বলেন, “কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের নামে রামপালে দেশি-বিদেশি লুটেরাদের মচ্ছব চলছে। জনস্বার্থে নয়, তাদেরই স্বার্থের কারণে সরকার সেখান থেকে উঠে আসতে পারছে না। দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থ এবং জনগণের স্বার্থ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। দেখা যাক সরকার শেষ পর্যন্ত কোনো দিকে আসে।”

অন্যদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘রামপালে বিদ্যুৎ প্লান্ট করছেন কয়লা দিয়ে। আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের গোটা দক্ষিণাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। নদী মাছশূন্য হবে, মানুষের জীবন-জীবিকা নষ্ট হয়ে যাবে।’

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় এক জনসভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

এদিকে, বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না। সব তথ্য এবং খোঁজ-খবর নিয়েই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

পার্সটুডে/এআর/২৭