সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে আমেরিকা
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে সম্মত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে যাতে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করতে পারে সেজন্য দুই দেশ বাড়তি পদক্ষেপ নেবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গতকাল (সোমবার) ইএমকে সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে জন কেরির আলোচনায় নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া, গণতন্ত্র সমুন্নত রেখে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ সময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সুশাসনের প্রতি জোর দেন তিনি।
জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের ধরার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু প্রযুক্তিগত উন্নত একটি দেশ, তাই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা আমাদের তথ্যগত সহায়তা প্রদান করতে পারে। এটা সম্ভব হলে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা হয় এবং এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবেই হতে হবে।’
বর্তমান সন্ত্রাসের ধরন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আশ্চর্যের ব্যাপার যে আজকাল উচ্চবিত্ত, ভালো ঘরের ছেলেরা এই সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। যাদের কোনো কিছুরই অভাব নেই, উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেরা সন্ত্রাসের পথে পা বাড়াচ্ছে...যার একটিই কারণ—তাদের প্রতি তাদের অভিভাবকেরা যথাযথভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন না।
বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএল বা দায়েশ) যোগাযোগ আছে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার উদ্দেশ্য ছিল জাতিকে বিভক্ত করা।
বাংলাদেশ অবশ্য বরাবরই দেশে জঙ্গি হামলার ব্যাপারে আইএসের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে। সরকারের দাবি, দেশিয় জঙ্গিরাই এসব হামলা করছে।
জন কেরি বলেন, এসব হামলা চালানোর জন্য সিরিয়া কিংবা ইরাক থেকে জঙ্গিরা বাংলাদেশে আসেনি এটা সত্য। তবে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, বাংলাদেশে স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ আছে। এ সময় তিনি জানান, সিরিয়া ও ইরাকে তাড়া খেয়ে বিদেশি জঙ্গিরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে।
জন কেরির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি এ এম রাশেদ চৌধরীকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের এসব অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জন কেরি।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে জন কেরির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন।#
পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/৩০