ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক জোরদার:
ফিলিস্তিন ইস্যু এবং বিদেশী হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় তেহরান-আঙ্কারা ঐক্যবদ্ধ
-
ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক জোরদার
পার্সটুডে- তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান তেহরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সংসদ স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কলিবফ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচির সাথে সাক্ষাৎ ও পরামর্শ করেছেন।
গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে দেয়া সাক্ষাতে মুসলিম বিশ্বের বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন: শত্রুরা মুসলিম জাতির ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তাই আশা করা যায় যে মুসলিম দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসবে।
এই বৈঠকে, দুই দেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে, পেজেশকিয়ান এই সম্পর্কগুলোকে গভীর, অকৃত্রিম এবং ব্যাপক সম্ভাবনায় বলে বর্ণনা করেছেন, আরও বলেছেন: যদি মুসলিম দেশগুলি দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যায়, তবে কোনও শক্তি মুসলিম জাতির জন্য সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম হবে না।
ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কলিবফ তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বলেছেন: ইহুদিবাদী ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম দেশগুলোর শক্তিশালী হওয়া এবং ঐক্য ও উন্নতির বিরোধিতা করে আসছে এবং এই অঞ্চলের দেশগুলিকে বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত রাখার চেষ্টা করছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সাথে বৈঠক সম্পর্কে আরও বলেছেন: সাধারণ এবং ব্যক্তিগত উভয় অধিবেশনেই, গাজা এবং ফিলিস্তিনের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল, যা সর্বদা উভয় দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়গুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন: এই অঞ্চলে ইসরায়েলের আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী নীতি যা এই অঞ্চলের সকল দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরান এবং তুরস্ক পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাবলীতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। ফিলিস্তিন এবং গাজার বিষয়টি সর্বদাই দুই দেশের আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে আছে। কারণ উভয়ই ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে করে। ইরান এবং তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই অঞ্চলে ইসরায়েলের এবং মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে।
ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক গভীরভাবে প্রোথিত এবং ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধন রয়েছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সহযোগিতা জোরদার বহিরাগত চাপ কমাতে এবং নিজেদের স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে ফিদানের বৈঠক এবং পরামর্শ থেকে দেখা যায় যে মুসলিম দেশগুলির মধ্যে সমন্বয় এবং ঐক্য যে কোনো সংকটক সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে এবং বিদেশী শক্তিগুলিকে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে যখনই মুসলিম দেশগুলি একক ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কাজ করেছে, তারা বিদেশী চাপ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে ফিদানের বৈঠক এবং আলোচনা থেকে আরও স্পষ্ট হয় যে ইরান ও তুরস্ক কৌশলগত সমন্বয়কে শক্তিশালী করতে চাইছে; এমন একটি সমন্বয় যা কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করবে না, বরং বিদেশী হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় অন্যান্য মুসলিম দেশগুলির জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।
ইরান ও তুরস্কের সমন্বয় ফিলিস্তিনের সমর্থনে একটি শক্তিশালী ফ্রন্ট গঠনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই সহযোগিতা ইসরায়েলের উপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করবে এবং গাজার জনগণের জন্য মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর সমর্থনের পথ প্রশস্ত করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে কৌশলগত জোট এই অঞ্চলে সংকট এবং প্রক্সি যুদ্ধের বিস্তার রোধ করতে পারে। এই সহযোগিতা, বিশেষ করে বর্তমান সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে, পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা এবং মানবিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে। ইরান ও তুরস্কের মধ্যে সহযোগিতা কেবল ফিলিস্তিনের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্যও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ; এই জোট সংকট হ্রাস, আঞ্চলিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং বিদেশী চাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ফ্রন্ট তৈরিতে নেতৃত্ব দিতে পারে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।