বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: পানিবন্দি লাখো মানুষ, ভোগান্তি চরমে
(last modified Tue, 11 Jul 2017 13:10:09 GMT )
জুলাই ১১, ২০১৭ ১৯:১০ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বানভাসী মানুষের ভোগান্তি চরমে
    বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বানভাসী মানুষের ভোগান্তি চরমে

বাংলাদেশে গত চব্বিশ ঘন্টায় টানা বৃষ্টি এবং সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলিতে বন্য পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

বাড়িঘর প্লাবিত হবার কারণে অনেকে মাচান, ঘরের চালা বা নিকটস্থ বাধে আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব। জ্বালানী ও গোখাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ায় মানবেতর অবস্থায় পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ।

তাছাড়া, নদীতে তীব্র স্রোতের ফলে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় ব্যাপক নদী ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। ঘুর্ণি স্রোতের কারণে পদ্মা  নদীতে ফেরী ও নৌচলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের ওপারে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের চাপ মোকাবেলা করতে  ভারত  তিস্তা ব্যারাজের ৬০ কিলোমিটার উজানে নির্মিত গজলডোবা বাঁধের ৫৪টি গেটের সব গুলো খুলে দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সকল নদ-নদীতে দ্রুত বেগে পানি বেড়ে যায়।  গত দুই দিন ধরে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিস্তা অববাহিকার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চর ও গ্রাম প্লাবিত করে দিয়েছে। হাজার  হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। 

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে আজ (মঙ্গলবার) সকালে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টেও বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনা-ব্রহ্মপুত্র-ঘাঘট ও ধরলাসহ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট, গাইবান্ধা,নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাংগাইল জেলায়  বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বগুড়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, যমুনা নদীর পানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আজ সকাল পর্যন্ত যমুনার পানি  ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে বিপদসীমার৩৮ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

গাইবান্ধা থেকে পওয়া খবরে জান যায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ৩৮ সে.মি. ও ঘাঘট নদীর শহরের ব্রিজ এলাকার পানি বিপদসীমার ২৪ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৪ উপজেলার ৬০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এসব এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে। যমুনার পানি বাড়ার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জ জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নদী তীর পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।  

পানির তোড়ে জেলা সদরের বাহুকা ও মেছড়া, কাজিপুর উপজেলার শুভগাছা ও মাছুয়াকান্দি এবং চৌহালী উপজেলা সদরের অদুরে খাস কাউলিয়া যমুনার পাড়ে থেমে থেমে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

এর ফলে বাংলাদেশ ও সীমান্তের ওপারে ভারতীয় আঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং  নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবার আশঙ্কা রয়েছে  বলে জানিয়েছেন  আবহাওয়াবিদরা। #

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১১