বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত, ফের বন্যার আশঙ্কা
(last modified Sat, 19 Aug 2017 13:14:14 GMT )
আগস্ট ১৯, ২০১৭ ১৯:১৪ Asia/Dhaka
  • ফাইল ফটো
    ফাইল ফটো

উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং মৌসুমী ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে অন্ততঃ ৭৭ জনের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশের ২৭ জেলার ১৩৩ উপজেলা ও ৪৩টি পৌরসভা এ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় ১১ লাখ ৪১ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৭০৬ জন বানভাসি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তথ্য পাঠিয়েছেন মাঠ কর্মকর্তারা। চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফার এ বন্যায় এ পর্যন্ত ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেছেন, “চলমান বন্যা বিস্তার ও স্থায়ীত্বে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের দুটি বড় বন্যার মতো ভয়াবহ না হলেও এবারের বন্যায় মৃতের সংখ্যা ওই দুই বছরের হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।

দেশে বড় বন্যাগুলোর মধ্যে ১৯৯৮ সালে প্রায় ৬৮ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আর ১৯৮৮ সালে বন্যা কবলিত হয়েছিল প্রায় ৬৪ শতাংশ এলাকা। সে সময় অনেক এলাকায় বন্যা দুই মাসের বেশি সময় স্থায়ী হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ পায়।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পদ্মায় পানি বাড়ায় অবনতি হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলার পরিস্থিতির।

এদিকে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। বন্যায় সড়ক এবং রেল লাইন তলিয়ে যাবার কারণে, বিভিন্ন এলাকাও যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। বাড়িঘর পানিতে ডুবে বা ভেঙে যাবার কারণে গৃহহীন হয়ে বন্যাকবলিত লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ, সড়ক বা কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।  পানিতে তলিয়ে যাবার কারণে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।   কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে,  ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি কমা অব্যাহত থাকলেও গঙ্গা-পদ্মার পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বাড়বে।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এখন বন্যা কবলিত।

ত্রাণের অপেক্ষায় বানভাসি নারীরা

অন্যদিকে, আগস্টের শেষভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় তৃতীয় দফা বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কারণে দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বছর জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে মৌসুমের প্রথম বন্যায় অন্তত ১৩ জেলার অনেক উপজেলা প্লাবিত হয়। অগাস্টে চলমান বন্যায় ২৭ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে।

এর মধ্যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ফের বন্যার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

পদ্মার পানি বাড়ার কারণে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে।  

আগস্টের ২৪-২৫ তারিখ থেকে উজানে ফের বৃষ্টি বাড়তে পারে। বাংলাদেশেও বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে ঈদের আগে থেকে বা সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে আবার বন্যা দেখা দিতে পারে। তাতে দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ভয়াবহ বন্যায় বিধবস্ত দিনাজপুরের দূর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বানভাসি মানুষকে ত্রাণ বিতরণের জন্য আগামীকাল সকালে দিনাজপুরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সকাল ১১টায় দিনাজপুর জেলা স্কুল আশ্রয় কেন্দ্র এবং বেলা ১২টায় বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৯

 

ট্যাগ