জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানাল আওয়ামী লীগ
-
এইচ টি ইমাম
মনোনয়ন ফরমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এছাড়া, বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে দলটি।
আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে এসব দাবি জানান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
বৈঠক শেষে এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “হাইকোর্ট থেকে জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থীর বিষয়ে একটি তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারা মনোনয়ন ফরমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। দলের জায়গায় তারা তো লিখেছে বিএনপি, কিন্তু তারাতো বিএনপির নয়-যেটা বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের মনোনয়ন বাতিলযোগ্য। আমরা কমিশনকে জামায়াতের মনোনয়ন বাতিলের অনুরোধ করেছি।”
বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে এইচটি ইমাম বলেন, “খালেদা জিয়া বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান পদে বহাল নেই, তাই নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তার ছবি ব্যবহার করা যাবে না। অন্যদিকে তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামি। তাই তারেকের ছবি নির্বাচনী পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে কি না, সেই বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পোস্টার সম্পর্কে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নির্বাচনী পোস্টারে ছবি থাকবে দলের যিনি সভাপতি তার। বর্তমান সভাপতির ছবি এবং প্রার্থীর ছবি। বিএনপি তারা প্রচার -প্রচারণায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার দুইজনের ছবি ছাপাচ্ছেন। এটি তো আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। বর্তমান সময়ে খালেদা জিয়া তো সভাপতি নন বিএনপির। বর্তমান সভাপতি তাদের মতে তারেক রহমান।”
নোয়াখালী-৫ আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যে নির্বাচনের আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন- যেখানে নির্বাচনী সমাবেশ হবে, সেখানে একটি লাঠির মাথায় ধানের শীষ প্রদর্শন করা হবে। এটি আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। কদিন আগে আমরা পল্টনে এসব লাঠির নির্মম ব্যবহার দেখেছি।”
বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান এইচটি ইমাম।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে ১১৮টি এনজিওকে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, এর মধ্যে চারটি এনজিওর বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি রয়েছে। এই চারটি হচ্ছে- খান ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, লাইট হাউজ ও মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ। নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, যারা কোনো দল, ব্যক্তি বা বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের আদর্শের প্রতি অনুগত। এই চারটি প্রতিষ্ঠান বিএনপি রাজনীতির সম্পৃক্ত মন্তব্য করে তিনি এই চারটি এনজিওকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এইচটি ইমাম বলেন, “সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়টি এর আগেও আমরা কমিশনে জানিয়েছি। আজও আমরা লিখিতভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অবগত করেছি এবং এর প্রতিকার চেয়েছি। সারা দেশে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে অথচ বিএনপি-জামায়াত উল্টো অভিযোগ করে যাচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরব।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আস্থাহীনতা নেই। এখানে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটি একটি কোর্টের মতো, সেখানে একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকলের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।”
প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওসার ও নজিবুল্লাহ হিরু প্রমুখ।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১