নুসরাত হত্যা: সোনাগাজীর সাবেক ওসি সাময়িক বরখাস্ত
(last modified Fri, 10 May 2019 05:26:00 GMT )
মে ১০, ২০১৯ ১১:২৬ Asia/Dhaka
  • নুসরাত হত্যা: সোনাগাজীর সাবেক ওসি সাময়িক বরখাস্ত

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ সদর দফতর জানায়, নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে না নেয়া, পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুরে ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা আজ (শুক্রবার) গণমাধ্যমকে জানান, “পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোয়াজ্জেম হোসেন আপাতত বেতন-ভাতা ও পদ অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। শুধু নিয়ম অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।”

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। ওই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোনাগাজী ঘুরে এসে ৩০ এপ্রিল রাতে পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল ও এসআই ইউসুফের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল কবিরের বিরুদ্ধেও দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ও নুসরাত জাহান রাফি

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয় সেখানে। কিন্তু অনেকেই এ ঘটনায় সোনাগাজীর পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং আসামি ধরতে গড়িমসির অভিযোগ করেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে ১০ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোনাগাজী থানার দায়িত্ব সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে।

ওই দিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। তার ভাইয়ের দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটি রূপান্তরিত হয় হত্যা মামলায়। তখন অভিযোগ ওঠে, ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ওসি মোয়াজ্জেম নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলার চেষ্টা করেন।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনা সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করলেও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর ঘটনার তদন্তে যথাযথ গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে অবহেলার পাশাপাশি সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করে দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১০

ট্যাগ