ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার
বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের প্রধান মৌসুম ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে সরকার ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরের জেলায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
গতকাল চামড়া খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে গরুর চামড়া ছাড়াও সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দর নির্ধারণ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। বকরির চামড়া কেনাবেচা হবে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। মহিষের চামড়া গরুর চামড়ার দরে কিনবেন ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা।
তবে, সভায় ট্যানারি মালিকরা কোরবানির পশুর চামড়ার দর অন্তত: ৪০ শতাংশের কমানোর জন্য দাবি জানান। এ সময় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, গত পাঁচ বছরে চামড়া খাতে ধস নেমেছে। সঠিকভাবে ট্যানারি স্থানান্তরিত না হওয়ায় কমপ্লায়েন্স হয়নি চামড়া শিল্পনগরী। এতে রফতানির বাজারে চামড়ার চাহিদা কমেছে। এ কারণে তিনি এ বছর চামড়ার সংগ্রহ মূল্য কমিয়ে রাখার প্রস্তাব দেন। এসময় চামড়া শিল্পের বর্তমান দুর্দশার জন্য তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেন।
জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, কারখানা স্থানান্তরের পর ট্যানারি মালিকরা এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। তবে বাজারে কৃত্রিম চামড়ার পণ্যের পাশাপাশি চামড়াজাত পণ্যের দামও বেড়েছে। কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা সেবামূলক কাজে ব্যবহার হয়। তাই এটি মানবিকভাবে বিবেচনা করতে হবে।

এদিকে, চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্যানারী মালিকদের কাছে তাদের প্রচুর বকেয়া পাওনা রয়েছে। ট্যানারি মালিকদের সরকার ব্যাংক ঋণ দিলেও ব্যবসায়ীদের নিজেদেরই পুঁজির জোগান দিতে হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় গবাদি পশুর ক্ষয়-ক্ষতির কারণে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলেও আশংকা ব্যবসায়ীদের।
সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচা চামড়ার বাজার দর বিবেচনায় নিয়ে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া গরিবের হক। তারা যেন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
চামড়াকে জাতীয় সম্পদ উল্লেখ করে শিল্পের কাঁচামাল যাতে পাচার হয়ে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
সভায় বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, চামড়া শিল্পনগরী কমপ্লায়েন্স না হওয়ায় আমরা রফতানির বাজার ধরতে পারছি না। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে রফতানি কমছে।
উল্লেখ্য, এ বছর ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ আগস্ট। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন খামারে এ বছর ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার; খাসি-বকরি ও ভেড়ার সংখ্যা ৭২ লাখ এবং উট ও দুম্বার সংখ্যা ৬ হাজার ৫৬৩। এর মধ্যে এক কোটি ১০ লাখ পশু এ বছর কোরবানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭