আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আজকেও প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোচ্চার রয়েছে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুয়েটের ভিসি’র পদত্যাগ এবং ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদের এ দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।
সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে দাবি জানিয়েছেন সেই দাবির সঙ্গে আমরা একমত। ক্যাম্পাসে বাজে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক এটি আমরাও চাই। আমরা চাই ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের যে কোনো ধরনের রাজনীতি বন্ধ হোক। আবরার হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রভোস্টের পদত্যাগ
এদিকে, আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ক্রমাগত চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ড. জাফর ইকবাল। তিনি আজ প্রশাসনের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
নির্যাতন নিয়ে গণতদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব আনু মুহাম্মদের
আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যানারে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জানান, 'দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনের বিষয়ে গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। কেবল শিক্ষার্থীরা নয়, কমিটিতে শিক্ষকরাও থাকবেন। নির্যাতনের চিত্র সারা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে।'
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিরোধিতা ছাত্রলীগের
তবে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবির বিরোধিতা করে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আজ ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে আবরার হত্যার মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
আবরার হত্যার একদিন পর বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি কেমন ভিসি? একটা ছাত্র মারা গেল আর এতটা সময় তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন।’ উপাচার্যের তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাবিতে ছাত্রদলের মৌন মিছিল
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মুখে কালো ব্যাজ বেঁধে মৌন মিছিল করেছে। এর আগে বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় ছাত্রদলের দুইজনকে আটক এবং দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ওদিকে, আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার বিচারের দাবিতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বরে শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বলন করে আবরারের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এবং নিহত আবরারের আত্মার শান্তি কামনা করেন।
চলমান আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন
এদিকে, আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় চলমান আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
আজ বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন বিষয়ে নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি ক্ষমতাসীনদের খুনের সংস্কৃতির ধারাবাহিক চর্চার একটি অংশ মাত্র। আজ তাই বাংলাদেশের মানুষের পক্ষের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।