খাগড়াছড়িতে ৪ গ্রামবাসীকে হত্যার অভিযোগে অবশেষে বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে একই পরিবারের তিনজনসহ চার গ্রামবাসীকে হত্যার অভিযোগে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্থানীয় ক্যাম্পের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ঘটনার তিনদিন পর মামলা নথিভুক্ত করেছে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) হাবিলদার মো. ইসহাক আলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন বিজিবির গুলিতে নিহত মফিজ মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মানিক মিয়া বাদী হয়ে ৪০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দেয়। এক ঘটনায় দুটি মামলা হবে না মর্মে জানিয়ে দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহনুর আলম। পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী। এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যায় মামলা গ্রহণ করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে এ মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মো. মফিজ মিয়াসহ অপরাপর ব্যক্তিদের মারধর, জখম ও একেবারে সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিজিবির হাবিলদার মো. ইসহাক আলীর নেতৃত্বে অভিযুক্ত বিজিবি সদস্যরা সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালানোর সময় বাধা দেওয়ায় বিজিবি সদস্য শাওন খানকে সরাসরি গুলি করে হত্যার অভিযোগ আনা হয় হাবিলদার ইসহাক আলীর বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) সাদের আলীর বাগানের চার টুকরা কাঁঠাল গাছ পরিবহন করার সময় মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে বিজিবি সদস্যরা বাধা দেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় এক বিজিবি সদস্য এলোপাতাড়ি গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহাব মিয়া ও তার ছেলে মো. আকবর আলী।
এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন খান, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মো. মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান সাহাব মিয়ার আরেক ছেলে আহাম্মদ আলী ও বিজিবি সদস্য শাওন খান।
এদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আহাম্মদ আলীর শ্বশুর মো. মফিজ মিয়া। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মো. মফিজ মিয়ার ছেলে মো. হানিফ মিয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই ঘটনায় মাটিরাঙ্গা থানা গত বৃহস্পতিবার বিজিবি সদস্য ইসহাক আলীর দায়ের করা মামলা রেকর্ড করেন। ওই মামলায় চার মৃত ব্যক্তিসহ ১৯ জন জ্ঞাত এবং ৭০ জন অজ্ঞাতনামা এলাকাবাসীর বিরূদ্ধে হত্যা, বিজিবি সদস্যের ওপর আক্রমণ, অস্ত্র লুটসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়।
এ প্রসঙ্গে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনের সেবা পাবার অধিকার সবার আছে। কোনো বাহিনীর সদস্যরা আইনের বাইরে নয়। এখন প্রকৃত তদন্ত, আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিন ভূইয়া বলেন, মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে মো. মানিক মিয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।