করোনা কিটের নমুনা নেয়নি বিএসএমএমইউ, সাময়িক সনদ চাইল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
বাংলাদেশ সরকারের ঔষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়ার পর ১০ দিন কেটে গেলেও এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য এখন পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য করোনা শনাক্তকরণ কিটের নমুনা নেয়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। ফলে কিটের ব্যবহারিক পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো কিট ব্যবহারের জন্য সাময়িক সনদ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আজ (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অনুরোধ জানান। নানা টানাপোড়েন শেষে গত ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিএসএমএমইউ ও আইসিডিডিআরবি-কে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’-এর এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য। এরপর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেন। সেসব বৈঠকে গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে প্রটোকল, প্রয়োজনীয় কাগজ ও আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। অপরদিকে এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য বিএসএমএমইউ’র পক্ষ থেকে একটি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রক্রিয়ায় শুরুর দশ দিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কিটের স্যাম্পল নেয়নি বিএসএমএমইউ। উপায়ন্ত না দেখে সোমবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের অপারগতা, বিএসএমএমইউ কাছে কিট পৌঁছাতে পারি নাই। আমাদের কিট আছে কিন্তু তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য যে পত্র সেটা আমাদের কাছে এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।”

মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, “আমাদের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) যে কমিটি করেছিল তাদের পূর্ণক্ষমতা দেওয়া হয়নি। প্রতিটি ধাপে ধাপে তাদের অনুমতি নিতে হচ্ছে। ভাইস চ্যালেন্সরের দপ্তরে অনুমোদনের অপেক্ষায় থেমে আছে যাবতীয় কার্যক্রম।”
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে কিট আছে আমরা দাবি করছি এটা কার্যকর। কিন্তু আমরা এখনো পর্যন্ত সরকারের অনুমোদনের ধারপ্রান্ত পর্যন্ত পৌছাতে পারিনি। প্রতিদিন সাংবাদিকরা আমাদের ফোন করেন আমরা ওনাদের বলি কালকে, কালকে।”
গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অভিযোগের বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, “নো কমেন্টস। আমি এই প্রজেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করব না।”
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “আমরা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে, এটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রুত করাটা দরকার। এ সময়ে আমরা জাতীর জন্য কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারতাম। হয়তো সবকিছুর পরিবর্তন করতে পারতাম না। কিন্তু মানসিকভাবে মানুষকে একটা স্বস্তি দিতে পারতাম।”

তিনি বলেন, “জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে আমরা সরকারের কাছে একটা আবেদন করতে চাইছি। যতদিন পর্যন্ত না হয়। তুলনামূলক রিপোর্ট না আসে ততদিন আমাদেরকে সাময়িক সনদপত্র দেন। যাতে আমরা লোকের করোনা হয়েছি কি হয়নি এ পরীক্ষাটুকু করে দিতে পারি।”
জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দশ লাখ কিট উৎপদানের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। সরকারের রেজিস্ট্রেশন পেলেই আমরা উৎপাদনে যেতে পারব। জরুরি ভিত্তিতে আমরা একটা কারাখানা স্থাপনের চেষ্টা করছি। প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে আগামী দশ দিনের মধ্যেই কারাখানার অবকাঠামো প্রস্তুত করতে পারব।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে এই কিট উদ্ভাবন করেন একদল বিজ্ঞানী। দলের অন্য গবেষকরা হলেন- ড. ফিরোজ আহমেদ, ড. নিহাদ আদনান, ড. মো. রাইদ জমিরুদ্দিন, ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।