মে ২৭, ২০২০ ১৬:৩৭ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে ৭ জনের মৃত্যু, রাজধানীতে কালবৈশাখীর তাণ্ডব

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড় এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত দেখা দিয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ও আজ (বুধবার) সকালে ঝড়ের কবলে পড়ে জয়পুরহাট ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই শিশুসহ এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ বছর বয়সী এক নারী, ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে ও সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে শিশু রয়েছে। সকালে ঝড়-বৃষ্টির সময় রসূলবাগ এলাকায় বজ্রপাতে ট্রান্সফরমার থেকে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে একটি টিনের ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় ঘর থেকে বের হতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ওই তিনজনের মৃত্যু হয়।

জয়পুহাটে ঝড়

ওদিকে জয়পুরহাটে জেলার ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে প্রচণ্ড ঝড়ে মাটির ঘরে দেয়াল চাপায় চারজন মারা গেছেন। তারা সবাই ঝড়ের সময় ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এছাড়া ঝড়ে ৪০টি গ্রামে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে কয়েক শ’ পরিবার।

দেয়াল চাপায় নিহতরা হলেন- ক্ষেতলাল পৌর শহরের খলিশাগাড়ী মহল্লার একই পরিবারের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শিল্পি বেগম (২৮), তার দুই ছেলে নেওয়াজ (৭) ও নেওয়ামুল (৩) এবং কালাই উপজেলার হারুঞ্জা গ্রামের মৃত ছালামতের স্ত্রী মরিয়ম নেছা (৭০)।

এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী থাকে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড বেগে ঝড়। এতে বাতাসের তীব্রতায় মুহূর্তেই বাড়ির টিনের চালা উড়ে যায়। উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছ, ভেঙ্গে গেছে এ দুই উপজেলার শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বাতাস আর বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ জুড়ে বোরো ধান কাদা-পানিতে একাকার হয়েছে। রাতের ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঝড়ে ক্ষেতলাল এবং কালাই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবার সকালে ফায়ার সার্ভিস রাস্তায় গাছ সরানোর কাজ শুরু করেছ।

রাজধানীতে ঝড়

এদিকে রাজধানীতে মঙ্গলবার মাঝ রাতে থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৭৮ থেকে ৮৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়ের তাণ্ডবে কোনো কোনো এলাকায় উপড়ে গেছে গাছপালা। ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

আবহাওয়া অফিস ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। যার মধ্যে সকালে মাত্র ৩ ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত যা সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালক কাওসার পারভীন বলেন, সমুদ্রে বায়ুচাপের তারতম্য থাকায় এ মুহূর্তে বাতাসের তীব্রতা বেশি। তাই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে অমাবস্যার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে ২ থেকে ৪ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঢাকার রমনা, ধানমন্ডি, হাতিরঝিল, হাইকোর্ট ও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে। ভোর থেকেই এসব গাছ অপসারণ করে রাজপথ সচল করতে তৎপর হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনসহ সেবা সংস্থাগুলো।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই দেশের সকল সমুদ্রবন্দরসমূহে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

আগামী পাঁচদিন বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতর। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের এই সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। এছাড়া আগামী দুইদিন সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ