‘বাংলাদেশে নিরাপত্তা পাওয়ার মতো প্রতিষ্ঠানের অভাব, জনগণের তীব্র প্রতিবাদ প্রয়োজন'
(last modified Wed, 12 Aug 2020 09:25:18 GMT )
আগস্ট ১২, ২০২০ ১৫:২৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে না-বলে দাবি দেশটির সরকারের। তবে সম্প্রতি কক্সবাজারে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো.রাশেদ পুলিশের গুলিতে নিহত হবার পর বিষয়টি নিয়ে আবারো সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন মহল।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে রাজপথে মানববন্ধন,আলোচনা সভা, নিন্দা বিবৃতি, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনের দাবি কোনো কিছুই থামাতে পারে নি সরকারি বাহিনীর এমন বেআইনি কর্মকাণ্ড। আতঙ্কিত মানুষ বরং বিস্মিত হচ্ছে এটা জেনে যে,এরকম শ’দেড়েক হত্যা সংঘটিত করে একজন পুলিশ কর্মকতা এজন্য বাহাদুরীর পদক পেয়েছে।

ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত এ প্রসঙ্গে দায়ের করা রিটের প্রক্ষিতে অথবা কখনো  আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছে। সরকার তা গ্রাহ্য করছে না। বেশ কয়েকটি রিটের প্রেক্ষিতে সরকার সংশ্লিষ্ট সবার কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে;জবাব পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ সরকার আদালতের রায়  মানছে না বা আদালত সরকারকে বাধ্য করতে পারছে না।

অধিকার'র সম্পাদক আদিলুর রহমান খান

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান রেডিও তেহরানকে বলেছেন,বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন পাবার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান এখন অবশিষ্ট নেই। তাই  এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যা -গুম বা সরকারি হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত না জনগণ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হন।  

অধিকারের ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) হিসেব আনুযায়ী দেশে করোনা সংক্রমনের মাঝেও তিন মাসে ৭২ জন বিচাবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৭ জন ক্রসফায়ারে এবং পাঁচজন পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছেন।

মেজর অব.সিনহা মো. রাশেদ

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে,চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকণ্ড ঘটেছে ১৯৬টি। গত বছর ২০১৯ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৩৮৮টি।

অধিকার মনে করে দেশে একটি গণতান্ত্রিত সরকার না থাকা, রাষ্ট্র কর্তৃক হত্যাকারীদের দায়মুক্তির সুযোগ এবং  অকার্যকর বিচার ব্যবস্থার কারণে এরকম বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

এরকম শ’পাঁচেক হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিট আবেদনকারী মানবাধিকার আইনজীবী  হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেছেন,এখন পুলিশের হাতে বেশি ক্রসফায়ার হচ্ছে। আবার অনেক সময় ক্রসফায়ারের কথা বলে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়। সেটি জানা যায় না।

তিনি বলেন,কক্সবাজারে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে সেটিও মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে  ঘটানো হয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। তিনি মনে করেন,বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে  রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।

আইনজীবী  মনজিল মোরসেদ

আইনজীবী  মনজিল মোরসেদ বলেছেন,হাইকোর্টের জারি করা রুলগুলো এখনও পেনডিং আছে। সরকার এখনো জবাব দেয়নি। আমার রিটগুলোর এখনো জবাব পাইনি। তিনি বলেন,আমার রিট আবেদন ছাড়াও ক্রসফায়ার নিয়ে হাইকোর্টের একটি সুয়োমোটো রুল রয়েছে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রেরও একটি রিট আবেদন রয়েছে।

তিনি বিশ্বাস করেন,আদালত ইচ্ছা করলে হস্তক্ষেপ করে ক্রসফায়ার বন্ধ করতে পারে। আদালত অনেক সময় ইচ্ছা করলেও সরকার ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কারণে হয়তো করতে পারেন না। তবে আদালত এটার সমাধান করতে পারে, সরকারও করতে পারে এবং বাহিনীও সমাধান করতে পারে। এদের যে-কেউ  উদ্যোগ নিলে  এই বিচাবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড  বন্ধ  হয়ে যাবে।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১২

 

ট্যাগ