‘বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের চেয়ে বেশি অর্থপাচার করে সরকারি কর্মচারীরা’
(last modified Thu, 19 Nov 2020 06:35:00 GMT )
নভেম্বর ১৯, ২০২০ ১২:৩৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদরা নয়, বিদেশে বড় অংকের অর্থ পাচারীদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যাই বেশি। গতকাল (বুধবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গোপনে কানাডার টরোন্টোতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যাই বেশি হবে। কিন্তু যে তথ্য পেয়েছি তাতে অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়।”

পরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, “বিদেশে টাকা পাচার করছে এমন অনেক লোক আছে এবং অনেকে তাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে রাখছে। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চার জন। এছাড়া কিছু আছেন তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরো তথ্য সংগ্রহ করছি।”

তিনি বলেন, “শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়াতেও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়।”

অর্থ পাচার হওয়ার জন্য বিদেশি সরকারও কিছুটা দায়ী উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেমন- সুইজারল্যান্ডে কে ব্যাংকে টাকা রাখল, সেই তথ্য আমাদের দেওয়া হয় না। তারা স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার কথা বলে, কিন্তু যদি বলি কার কার টাকা আছে, সেই তথ্য দাও, তখন তারা দেয় না। এটি একটি ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশে যদি কেউ বৈধভাবে টাকা নেয়, তাহলে কোনো আপত্তি নেই। তবে অবৈধভাবে পাচার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 হামিদুল হক

‘বাংলাদেশ এখন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন-এর আহ্বায়ক হামিদুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে। সেখানে সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সবাই আছে। তবে কানাডার ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তাদের দিকে আঙ্গুল তুলে আসলে দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের আড়াল করার চেষ্ট হচ্ছে। এখানে ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে, আর রাজনীতিবিদরা ব্যবসায় ঢুকে পড়েছে। তাদের সহযোগী হয়েছে আমলারা। এ মিলে তৈরি হয়েছে গণবিরোধী সিন্ডিকেট।

ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় নিয়ে দুর্নীতির বিস্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ  বামপন্থী নেতা বলেন, পাপিয়া, সম্রাট বা পাপলু-এসব পাতি নেতাদের দুর্নীতির যে বিশাল ভাণ্ডার জানা গেছে- সে তুলনায় তাদের গডফাদারদের কে কত টাকা পাচার করেছে তা অজানাই রয়েছে। তবে এর মধ্যেও দুর্নীতি দমন কমিশন বিশজন এমপি’র দুর্নীতি তদন্ত করার কথা ঘোষণা করেছে।

ইকবাল মাহমুদ

‘দুদকের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন’

তবে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ গ্রহণ থেকে প্রসিকিউশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হবে। যাতে দুদকের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন।

গতকাল (বুধবার) দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ও মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এক ভার্চুয়াল সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ নির্দেশনা দেন। 

তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের পরে যদি দেখা যায় অভিযোগটি ভিত্তিহীন বা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত নয়, তাহলে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তি নিজেকে হয়রানির শিকার বলেও মনে করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে। অযথা দুদকের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, এ বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।’#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ