সর্বাত্মক লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি: বিমান চলাচল বন্ধ, উৎসবে ভাটা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল সকাল ৬ টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত আট দিনের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, জরুরি সেবাদানকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এসময় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। তাছাড়া, শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের সময়ে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও এর পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের কারখানাসমূহ খোলা রাখার সুযোগ চেয়েছে এসব খাতের উদ্যোক্তাদের চারটি সংগঠন।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করছেন। লকডাউনের মধ্যে তা আরও জোরদার করবেন। পাশাপাশি সরকারের সব শর্ত তারা মেনে চলবেন। কিন্তু কারখানা খোলা রাখার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে রপ্তানির বাজার হারাতে হবে। এ ছাড়া কারখানা বন্ধের ফলে শ্রমিকরা গ্রামে গেলে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রোববার বিকেলে পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় মিলিত হন। ওই সভায় লকডাউনে কারখানা বন্ধ রাখা হলে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুই সপ্তাহ সবাইকে কষ্ট করে ঘরে থাকতে হবে। কারণ, এখনই হাসপাতালে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময়ে যাতে শ্রমিকেরাও বাড়িতে যেতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার। তিনি বলেন, কারখানা খোলার পর প্রয়োজনে শিফট করে, দিনরাত কাজ করে কিংবা ঈদের ছুটি কমিয়ে দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে। কিন্তু এখন পোশাক ও বস্ত্র খাতকে দিলে অন্যরাও একই সুবিধা চাইবে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে।
বিমান চলাচল বন্ধ
এদিকে, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য নির্ধারিত প্রায় ৫০০ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করেছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি)।
গতকাল রোববার সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান জানান নিষেধাজ্ঞার মাঝে চার্টার্ড ফ্লাইট, কার্গো ফ্লাইট, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এবং বিশেষ ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারবে ।
এর আগে, গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ঢাকা থেকে সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী ফ্লাইট স্থগিত করেছিল সংস্থাটি। সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গত ৩ এপ্রিল থেকে যুক্তরাজ্য ব্যতীত সকল ইউরোপীয় দেশসহ আরও ১২টি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে।
উৎসবে ভাটা
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে, পহেলা বৈশাখের উৎসবের অংশ হিসেবে সীমিত আকারে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এবারে করোনা সংক্রমণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্বচ্ছ ফেস শিল্ড এর ওপর নানা মুখচ্ছবি এঁকে মুখোশ বানানো হচ্ছে।
এদিকে, কোনোরকমের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই আজ সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে বাংলা একাডেমীর একুশে বই মেলা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা জনিয়েছেন, এবার সীমিত সময়ের মেলায় স্টল নির্মাণের খরচও তুলতে পারেননি তারা।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১২
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।