কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও গ্রেপ্তার-জরিমানা
হাসপাতালে অক্সিজেন ও শয্যার তীব্র সঙ্কট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন অতিক্রম হয়েছে। শুক্রবার (২ জুলাই) ছুটির দিন। সকাল থেকেই আষাঢ়ের বৃষ্টি। রাজধানীর সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দায়িত্ব পালন করছেন।
চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাসি ছাড়াও রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি সদস্যরা। পাশাপাশি রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। বিনা কারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়ায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, কঠিন লকডাউন ও বৃষ্টির কারনে দুর্ভোগে পড়েছেন দিন আনি দিন খাই অবস্থার মানুষেরা । তাছাড়া , লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও নিত্য পণ্যের দাম বাড়তি। রাজধানীর বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। সবরকম মাছ কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বিক্রেতা বলছেন কঠিন লকডাউনের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
করোনা সর্বশেষ পরিস্থিতি
দেশে করোনায় একদিনে আরও ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৭৭৮ জনে। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪৮৩ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৯ লাখ ৩০ হাজার ৪২ জন। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার পাওয়া গেছে ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে বগুড়ায় মৃত্যু:
বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা (উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জাম) সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ১৩ ঘণ্টায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অন্তত ১০ জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল জানান, হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা যুক্ত করা হয়নি। এমনকি ৮ শয্যা নিয়ে চালু করা আইসিইউ ইউনিটেরও মাত্র দুটিতে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। ফলে পুরো হাসপাতালের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটের ওই দুটি শয্যায় কেবল উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সররবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।
ডা. শফিক আমিন কাজল হাসপাতালে ২২৩ জন রোগী ভর্তির তথ্য দিয়ে আরও বলেন, আমাদের এই হাসপাতালে এখন যেসব রোগী আসছেন তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭২ এর মধ্যে। তাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিয়ে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাসপাতালে শুধু আইসিইউ ইউনিটের দুটি শয্যায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে বিপুল সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খুলনা বিভাগে শয্যা সঙ্কট
খুলানা বিভাগের ১০ জেলায় করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য শয্যা সংখ্যা মাত্র ১১৯৩টি। এ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে ১২০১ শরীরে শনাক্ত হয়েছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য চলছে হাহাকার।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলাভিত্তিক করোনা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভাগে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে ২৭৪ জন, তারপর কুষ্টিয়ায় ২২৫ জন এবং যশোরে ১৫৪ জন, ছোট জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ৯৪ বাগেরহাটে ৮৮জন ও মেহেরপুরে ৫৫ জন।
প্রবাসীদের জন্য অগ্রাধিকারের টীকা
এদিকে, বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদানের উদ্দেশ্যে আজ থেকে শুরু হয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)'র রেজিস্ট্রেশন। তবে প্রথম দিনেই রেজিস্ট্রেশন করতে এসে সার্ভার জটিলতায় ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে দুর দূরান্ত থেকে আসা প্রবাসগামী কর্মিদের। .
শুক্রবার (২ জুলাই) থেকে (প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত) দেশের ৪২ টি জনশক্তি অফিস, ৯ টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অথবা 'আমি প্রবাসী' অ্যাপে বিএমইটি'র এই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চলবে বলে আগেই জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/২