ঢাকায় করোনা মাঝেও বেড়ে চলছে ডেঙ্গু সংক্রমণ: মাঠে নেমেছে ভ্রাম্যমান আদালত
বাংলাদশে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মাঝেও বেড়ে চলছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব মতে, গত ছয় মাসে শনাক্ত হয়েছে ৬০১ ডেঙ্গু রোগী। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১০ জুলাই সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ১৭৯ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ১৭৮ জন, আর বাকি ১ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে , চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত ৬৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ছাড়া পেয়েছেন ৪৯৪ জন। তবে এই বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানালেও ৭ জুলাই জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদা নাসরীন বাবলীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তার স্বামী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেই এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালত
শনিবার (১০ জুলাই) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশক নিধনে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। এ সময় কয়েকটি বাড়ির মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। এ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, নাগরিকরা যদি তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন না করে তবে সিটি করপোরেশন একক প্রচেষ্টায় সকল সমস্যার সমাধান করে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে পারবে না। সবাই মিলে একত্রে কাজ না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর উভয় সিটি করপোরেশনে দশ জন করে ম্যজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে জমে থাকা পানি পাবে, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। সরকারি-বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানই ডেঙ্গু প্রজননে ভূমিকা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, রোদ-বৃষ্টির মিশেল আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেককে দায়িত্ববান হয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ও আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে এডিস মশার বংশ বিস্তারকে রোধ করতে হবে।
ডেঙ্গু সতর্কতা
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কারও যদি জ্বর থাকে তাহলে কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে হবে। সারা দেশে সিভিল সার্জনদের কাছে পর্যাপ্ত এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে। এর আগে, গত জুন মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডেই পাওয়া যাচ্ছে এডিস মশা। কোথাও কোথাও এডিসের ঘনত্ব বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষণার এই তথ্য এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পর্যালোচনা করে গবেষকরা বলছেন, জুলাই ও আগস্টে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। চিকিৎসকরাও বলছেন, ঢাকায় ডেঙ্গু বেড়ে চলেছে। করোনার এই সময়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কেউ বুঝতে পারছে না। নীরবেই বাড়ছে। এখনই নজর দেওয়া না হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে। #
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।