পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: এফডিসিতে মানব বন্ধন, সরকার ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যারা সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে রাতদিন ষড়যন্ত্র করছে তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। কারণ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে।’
আজ রোববার দুপুরে ধামরাইয়ের একটি বেসরকারি গাড়ি সংযোজনে কারখানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। কারখানাটিতে ভারতের অশোক লেল্যান্ড ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে।
ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায় সরকার বিএনপি
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য- সহিংসতার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা ।
রোববার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নারী অধিকার ফোরাম আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচীব বলেন, ‘আমরা রংপুরে দেখেছি, ছাত্রলীগের দুজন নেতা পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালিয়েছে। অতএব এসব ঘটনা কে ঘটাচ্ছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ করা কিংবা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ এটা ঘটিয়েছে সরকার নিজেই।’
তিনি বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে, তারা এসব ঘটনা ঘটিয়ে এক দলকে ক্ষমতায় রাখতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা চায় না। এ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে বারবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। বারবার গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। মানুষ আবারও সেটাই দেখতে চায়।’
এদিকে আজ রাজধানিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার জনগনের ওপর ভরসা করে নয়, তাদের দলয়ীয় প্রশাসন এবং নানা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে এফডিসিতে মানব বন্ধন
এছাড়া, বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আজ সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা বলেন, সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের দেশ বাংলাদেশ। যেকোনো প্রকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছি। কতিপয় স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, আমরা তাদের প্রতি ধিক্কার ও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন বক্তাগন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ
ওদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকলীন নোয়াখালীর চৌমুহনীসহ সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা, পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট অগ্নিসংযোগ এবং হতাহতের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নোয়াখালী জেলা শাখা।
শনিবার বিকেলে চৌমুহনী পৌরসভার নরোত্তমপুর মহল্লায় অবস্থিত ইসকন মন্দির প্রাঙ্গণে ঐক্য পরিষদ নোয়াখালী জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদ জেলা সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পাপ্পু সাহা বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন “সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম বানোয়াট গল্প রটাচ্ছে। নোয়াখালীতে হামলার ঘটনায় যে দুই জন হিন্দু মারা যান। তাদের মধ্যে একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম ও ব্যক্তিবর্গ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৃত্যু নিয়ে গল্প ছড়াচ্ছে।” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য খুনি ও দুষ্কৃতিকারীদের আড়াল করবে বলে মনে করছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।’ #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।