বিভিন্নমহলে কৌতূহল ও আলোচনা
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের ৪০ মিনিটের বৈঠক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনীতিকসহ বিভিন্ন মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজ নিতে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ বলা হলেও ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করছেন বিশ্লেষক-রাজনীতিকসহ অনেকে। যদিও সাক্ষাতে দুজনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি উন্নত চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রাক্কালে সেনাপ্রধানের এ সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হচ্ছে। সবাই বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।
সাক্ষাতের ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা (আইএসপিআর) আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এটা জানায়, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে এটা একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সস্ত্রীক গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় যান। প্রায় ৪০ মিনিট সেনাপ্রধান তার বাসায় ছিলেন। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কিছু সময় তারা একান্তে কথা বলেন। এ সময় বিএনপির অন্য কোনো নেতা ছিলেন না।’
অবশ্য বিএনপির নেতারা সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎকে ‘সৌজন্য’ হিসেবেই দেখছেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে এর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তিনি যাননি। তখন কোনো কোনো পত্রিকায় এমন খবর লেখা হয়েছিল যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি যাচ্ছেন না। এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে হয়তো তার সঙ্গে সেনাপ্রধান দেখা করেছেন। এটা আমার ধারণা।’
৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই রাজনীতিক বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। দীর্ঘ কারাভোগের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট তাঁকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি বাসায় ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
দীর্ঘদিন একাকী থাকা খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে গেলে সেখানে বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তার পরিবারকে কাছে পাবেন। এ সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, ভবিষ্যৎ রাজনীতিসহ দলীয় বিষয়-আশয়েও কথাবার্তা হতে পারে। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎ নিয়েও অনেকের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই সাক্ষাতের মাধ্যমে সেনাপ্রধান কোনো রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে থাকতেন পারেন বলে আমার ধারণা। কারণ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা ও অনিশ্চয়তার কথাও কোনো কোনো দিক থেকে বলা হচ্ছে।'
এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেদিন সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আন্তরিক কুশল বিনিময় করেন।#
পার্সটুডে/জিএআর/৪
