গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনা বৈঠক: কলকাতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল
(last modified Mon, 03 Mar 2025 08:32:36 GMT )
মার্চ ০৩, ২০২৫ ১৪:৩২ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন
    বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৮৬তম বৈঠকে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গেছেন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল।

আজ (সোমবার) স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১১টার দিকে কলকাতার নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। এরপরেই সড়কপথে তারা যান হাওড়া রেল স্টেশন। হাওড়া থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরে তারা যাবেন মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি ভারতের নদী কমিশনের সদস্যরাও যৌথভাবে ফারাক্কা পরিদর্শন করবেন। পরে ফিরে এসে অংশ নেবেন বৈঠকে।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জয়েন্ট রিভার কমিশনের (জেআরসিবি) সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তার নেতৃত্বে আছেন জেআরসিবি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিদরী জাহান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, জেআরসিবি সদস্য (কারিগরি কমিটি) মোহাম্মদ আবুল হোসেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সিলেট) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (কুমিল্লা) অতিরিক্ত মুখ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ঢাকা) হাইড্রো ইনফরমেটিক্স এবং ফ্লাড ফোরকাস্টিং বিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।

পরে কলকাতায় আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে অংশ নেবেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-১ অনুবিভাগের পরিচালক মোঃ মনোয়ার মোকাররম, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) তুষিতা চাকমা, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) আফজল মেহদাত আদনানসহ আর একজন।

জানা গেছে, পাঁচ দিনের ওই সফরে আগামীকাল মঙ্গলবার তারা ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর সন্নিহিত এলাকা পরিদর্শন করবে। ফারাক্কায় গঙ্গা নদীতে পানির স্তর, পানির প্রবাহ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখবেন তারা। ৫ মার্চ ফারাক্কা থেকে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা কলকাতায় ফিরবেন। পরের দুই দিন ৬ এবং ৭ মার্চ কলকাতার হায়াত রিজেন্সি হোটেলে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি দলটি।

৭ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেআরসিবি সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। এদিন বিমানবন্দরের বাইরে স্থানীয় গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে আবুল হোসেন জানান। তিনি বলেন, ৭ সদস্যের একটা প্রতিনিধি দল এসেছে। এটা একটা নিয়মিত বৈঠক। আমরা ফারাক্কা বাঁধ পরিদর্শন করতে যাচ্ছি। সেখানে দুই দেশের যৌথ প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করবে। ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত গঙ্গার চুক্তির বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর আমরা এই সফর করে থাকি। এই পরিদর্শন ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এই সফরে কোন বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে না। মূলত কারিগরি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।'

তবে এই সফরে নিয়ে তিস্তা নদীতে প্রবাহমান পানির কোন জরিপ হবে না বলে জানিয়েছেন আবুল হোসেন। তিনি এও বলেছেন গঙ্গা চুক্তির পুনর্নবীকরণ নিয়ে এখনই কোনো আলোচনা হবে না, এর জন্য একটা টেকনিক্যাল টিম আছে, তারা আলোচনা করবেন।'

গঙ্গার পানি বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন 'বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ (৩৮%) গঙ্গার পানির উপর নির্ভরশীল। মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই পানির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছরের। আগামী বছর ২০২৬ সালে সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

গত বছর আগস্ট মাসে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। তাই এই বৈঠকের মাধ্যমে উভয় দেশ নিজেদের মতামত বিনিময় করবে এবং ভবিষ্যতে কী ভাবে পানিবণ্টন আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩