বাংলাদেশের আপত্তি সত্ত্বেও চলছেই ভারতীয় 'পুশ-ব্যাক' অভিযান
তিন সীমান্ত দিয়ে আরও ৬১ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ
প্রতিদিনই বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পুশইন করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকালও তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আরও ৬১ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এরমধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ১৪ জন ও চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৬ জন। পুশইন করা সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ায়ার জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের আপত্তি ও উদ্বেগ সত্ত্বেও দেশটিতে থাকা অনিবন্ধিত বাংলাদেশিদের ‘পুশ-ব্যাক’ বা সীমান্তপথে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ভারত। গতকাল এক প্রতিবেদনে তারা একথা বলেছৈ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রোববার (২৫ মে), ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে প্রায় ১৬০ জন অনিবন্ধিত বাংলাদেশিকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে আগরতলায় আনা হয়, যাদের পরবর্তীতে স্থলপথে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দলে নারী ও শিশুরাও রয়েছে, যাদের সম্প্রতি দিল্লির বাইরের অঞ্চল থেকে আটক করে পুলিশ।
ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দীর্ঘ ও জটিল প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এড়িয়ে দ্রুত ‘পুশ-ব্যাক’ নীতির আওতায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এর বিরোধিতা করেছে। ৮ মে তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের প্রতি একটি কূটনৈতিক চিঠিতে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করে বলেছে, এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না এবং ‘প্রচলিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার’ প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়।
বিভিন্ন রাজ্যে অভিযান, নজরদারিতে বাংলাদেশিরা

পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের একাধিক রাজ্যে অনুপ্রবেশ বিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছে। সরকারি হিসাবে, সম্প্রতি পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে দেশের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আটকের পর এসব অনুপ্রবেশকারীদের বায়োমেট্রিক্স সংগ্রহ করে, পূর্বে তৈরি করা ভারতীয় পরিচয়পত্র (যেমন আধার কার্ড) বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে তাদের তথ্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয় যাতে ভবিষ্যতে আবার ভারতে প্রবেশ করলেও কোনও সরকারি পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে না পারে।
বায়োমেট্রিকস সংগ্রহের পর তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যারা সরাসরি সীমান্ত পথে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
আগরতলা হয়ে ফেরত
এর আগে, ৪ মে তারিখে গুজরাট থেকে আটক করা প্রায় ৩০০ বাংলাদেশিকে (যাদের মধ্যে ২০০ জন নারী ও শিশু) এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি ফ্লাইটে করে আগরতলায় আনা হয়। সেখান থেকে তাদেরও স্থলপথে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
২৬ মে (সোমবার), ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্স ডিরেক্টরেটের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘এই ধরনের পুশ-ইন বাংলাদেশ সরকারের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি জানান, সীমান্তে যেকোনো রকমের অব্যবস্থাপনা ও দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া উপেক্ষা করলে তা প্রতিবেশী সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।#
পার্সটুডে/জিএআর/২৮