মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহার
(last modified Tue, 27 May 2025 04:02:06 GMT )
মে ২৭, ২০২৫ ১০:০২ Asia/Dhaka
  • আদালতে এটিএম আজহারুল ইসলাম (ফাইল ফটো)
    আদালতে এটিএম আজহারুল ইসলাম (ফাইল ফটো)

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর  নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে সর্ব্বোচ আদালত এ রায় দেন।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। 

আপিল বিভাগের এই রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ টি এম আজহারুল ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্য বিজয়ী ও মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত ও বিএনপির ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্ততপক্ষে পাঁচজন কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ টি এম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাই। আমরা এটাও মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি, এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।’

আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘প্রথমটি বলেছেন অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ এই ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ মূল্যায়ন করা ছাড়াই আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিচারের নামে অবিচার। আরও বলেছেন, যেসব তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে আজকে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।’

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ওই বছরের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির সিদ্ধান্ত দেয়। এটাই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পায়।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে আছেন। আজহারের মুক্তির দাবিতে সম্প্রতি সারাদেশে সমাবেশ, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে তার দল জামায়াতে ইসলামী।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৭