ইরান 'পূর্ণ শক্তি' দিয়ে ইসরাইল-আমেরিকার আগ্রাসন মোকাবিলা করেছে: মুসাভি
-
মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি
ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জানিয়েছেন, গত মাসে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকার সমন্বিত আগ্রাসনের সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ সামরিক ক্ষমতা ও দক্ষতা দিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আজ (মঙ্গলবার) কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন মোহাম্মদ আল আতিয়াহ'র সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সব ধরনের সক্ষমতা ব্যবহার করে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং পূর্ণশক্তি দিয়ে দখলদারদের জবাব দিয়েছে।”
ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলা ও ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
গত ১৩ জুন ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর একাধিক বিমান হামলা শুরু করে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী প্রথমে ব্যাপক প্রতিরক্ষামূলক কৌশল নিয়ে জবাব দেয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দ্রুত, শক্তিশালী ও অনমনীয় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এই প্রতিক্রিয়ায় তারা ইসরাইলের গভীরে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক, সামরিক ও শিল্প স্থাপনাগুলোতে নির্ভুল হামলা চালায়।
এই প্রতিশোধমূলক অভিযানের নাম ছিল “অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি" যার আওতায় শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (অনেকগুলো ছিল মাল্টি-ওয়ারহেড ও সুপারসনিক), পাশাপাশি বহু সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
এই হামলায় তেল আবিবের কেন্দ্রস্থল (ইসরাইলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র) হাইফা, এর গভীর সমুদ্রবন্দর এবং দখলদারদের আধুনিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তি কেন্দ্র- বীরশেবা এলাকায় তীব্র আঘাত হানা হয়।
ইরানের পাল্টা হামলার চাপ সহ্য করতে না পেরে ইসরাইল ১২ দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির আবেদন করে, যদিও তাদের পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উন্নততম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা
মেজর জেনারেল মুসাভি তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন হামলার জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা অঞ্চলটির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সীমাবদ্ধতা ছাড়াই ইসরাইলকে পূর্ণ সহায়তা দিয়েছে—যার মধ্যে ছিল সরবরাহ লাইন, লজিস্টিক সহায়তা এবং সরাসরি সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের মুসলিম জনগণ, বিভিন্ন স্বাধীনচেতা মানুষ ও সরকার ইরানের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে এবং এই সংঘাত চলাকালীন ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
মুসাভি বলেন, “এই আগ্রাসন ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার পুরো প্রক্রিয়া বিশ্বের সামনে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ন্যায্য অবস্থানকে প্রমাণ করেছে এবং এটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক নীতি বা ন্যায়নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।”
কাতারকে ধন্যবাদ
এ সময় তিনি কাতারকে “বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র” হিসেবে আখ্যা দেন এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কাতারের জোরালো নিন্দার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি দোহা সরকারের এই 'মূল্যবান অবস্থান'কে সাধুবাদ জানান।
কাতারের প্রতিক্রিয়া
কাতারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, শুরু থেকেই তার দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে এবং ইরানের ওপর হামলার জন্য কাতারের আকাশসীমা ব্যবহার করতে স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তিনি মুসাভিকে ইসরাইলি হামলায় শহীদ হওয়া তার পূর্বসূরি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরির শাহাদতের জন্য শোকবার্তাও জানান।#
পার্সটুডে/এমএআর/৮