সংসদ ভবনে আগুন
দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
-
কেপি শর্মা ওলি
টানা দুই দিন ধরে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ আর সহিংসতার মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর শুরু হওয়া সহিংস বিক্ষোভে গতকাল (সোমবার) অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার পর তিনি পদত্যাগে বাধ্য হলেন।
আজ (মঙ্গলবার) তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রকাশ সিলওয়াল। নেপালের প্রেসিডেন্টকে পাঠানো চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী ওলি শর্মা বলেন, 'বিদ্যমান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশে আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আজ থেকেই এটি কার্যকর হবে।'

কে পি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর দেশটির সংসদ ভবনে অনুপ্রবেশ করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে জেন-জি বিক্ষোভকারীরা। সংসদ সচিবালয়ের মুখপাত্র একরাম গিরি অভিযোগ করে বলেছেন, শত শত বিক্ষোভকারী সংসদ এলাকায় ঢুকে মূল ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। আন্দোলনকারীরা কাঠামোগত সংস্কার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের জবাবদিহি দাবি করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে কাঠমান্ডু মহানগরীর মেয়র বালেন্দ্র শাহ আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি জেন-জি বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
ফেসবুক ও ইউটিউবসহ কয়েকটি সামাজিকমাধ্যম বন্ধের জেরে গতকাল সোমবার থেকে নেপালে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা রূপ নেয় সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলনে। নেপালের পার্লামেন্ট ভবনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিক্ষোভ-সমাবেশে মূলত জেন-জি প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেয়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালায়, দাঙ্গা-বিরোধী পোশাক পরা পুলিশের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং সরু গলিতে পুলিশকে তাড়া করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা একাধিক প্রভাবশালী নেতার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আক্রমণের শিকার হয় ওলি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার বাসভবনও। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
বিক্ষোভ দমনে পুলিশের দমন-পীড়নের জেরে ১৯ জন নিহত ও ৪০০ জনেরও বেশি গুরুতর আহত হয়। এরপরই আন্দোলন সরকারবিরোধী রূপ নেয়। বাধ্য হয়ে সরকার সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুললেও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ মূল দাবিতে পরিণত হয়। বিভিন্ন দল এমনকি ওলির মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যও এই দাবিতে সংহতি জানান। এই ঘটনার দায় নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

এর আগে তরুণদের আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের পর দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর সংকট নিরসনে সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।
পদত্যাগের আগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওলি জানান, বৈঠকটি সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোথায় বৈঠক বসবে তা উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেছিলেন, এই সংকটের সমাধান একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে সোমবারের বিক্ষোভ ও পরবর্তী ঘটনাগুলো আমাকে দুঃখিত করেছে। কোনো ধরনের সহিংসতা দেশের স্বার্থে ভালো নয়। শান্তিপূর্ণ ও আলোচনাভিত্তিক সমাধানই এখন প্রয়োজন।’ কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকের আগেই তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।
নেপালে থাকা বাংলাদেশিদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ
নেপালে তরুণদের বিক্ষোভের মুখে সরকারের পতন ও এ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে বাসার বাইরে বের না হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানিয়েছে, 'বিদ্যমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আপাতত নেপালে ভ্রমণ না করার জন্য সব বাংলাদেশি নাগরিককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'
বর্তমানে নেপালে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মীও রয়েছেন।
ভারত-নেপাল সীমান্তে কড়া সতর্কতা
নেপালের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১,৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ভারতের উত্তরাখণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচ রাজ্য নেপালের সীমান্তবর্তী। নেপালের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পাঁচ রাজ্যেই সীমান্তে তৎপরতা বেড়েছে। বিহারের নেপাল সীমান্তবর্তী সাতটি জেলায় নজরদারি বাড়িয়েছে সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং বিহার পুলিশ। পশ্চিম চম্পারণ, সীতামারি, মধুবনী, আরারিয়া, সুপৌল, পূর্ব চম্পারণ এবং কিষাণগঞ্জে টহলদারি বেড়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জারি করেছে ‘হাই অ্যালার্ট’।
নেপালি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট নেতা ওলি। এর আগে ২০১৫-১৬, ২০১৮-২১ ও পরে ২০২১ সালে আরও একবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।#
পার্সটুডে/এমএআর/৯