পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ: পাকিস্তানের দখলে ১৯ আফগান পোস্ট
https://parstoday.ir/bn/news/event-i152894-পাকিস্তান_আফগানিস্তান_সীমান্তে_ভয়াবহ_সংঘর্ষ_পাকিস্তানের_দখলে_১৯_আফগান_পোস্ট
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। দু’দেশই একে অপরকে সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালানোর অভিযোগ করছে।
(last modified 2025-10-18T14:57:34+00:00 )
অক্টোবর ১২, ২০২৫ ১৫:০৩ Asia/Dhaka
  • পাকিস্তান আফগান সীমান্তের ১৯টি পোস্ট দখল করেছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
    পাকিস্তান আফগান সীমান্তের ১৯টি পোস্ট দখল করেছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। দু’দেশই একে অপরকে সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালানোর অভিযোগ করছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী আফগান 'তালেবানের অযৌক্তিক হামলার জবাবে' আফগান সীমান্তের ১৯টি পোস্ট দখল করেছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে।

সেনাসূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, শনিবার রাতভর সংঘাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের ডুরান মেলা, তুর্কমানজাই, শহিদান, কুনার, চাগাইসহ ১৯টি পোস্ট থেকে পালিয়েছে আফগান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা। সংঘাতের সময় এসব পোস্টে কয়েক ডজন আফগান সেনা নিহত এবং আহত হয়েছেন। তাদেরকে ফেলে রেখেই কর্মকর্তা ও সদস্যরা পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ান-কে জানান, "তালেবান বাহিনী কয়েকটি সীমান্ত পোস্ট থেকে প্রথমে গুলি চালায়, আমরা চারটি পয়েন্টে পাল্টা আর্টিলারি হামলা চালিয়েছি।”  

অন্যদিকে, আফগান তালেবান কর্মকর্তারা দাবি করেন, ইসলামাবাদ আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় তারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে এবং পাকিস্তানের কয়েকটি পোস্ট দখল করেছে বলে দাবি করে।

তবে, পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক পাল্টা অভিযান চালিয়ে তালেবানদের মনোজবা ক্যাম্প সদরদপ্তর, জানদুসার পোস্ট, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার দুর্গ ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছে রেডিও পাকিস্তান।

নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এই অভিযানে ডজনখানেক আফগান যোদ্ধা ও ‘খারিজ’ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং তালেবান বাহিনীর অনেকেই পোস্ট ছেড়ে পালিয়েছে। কয়েকটি পোস্টে আগুন ধরে যায়।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি নিউজ সামাজিক মাধ্যমে জানায়, “আফগান দিক থেকে অযৌক্তিক গুলি চালানো হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তীব্র ও কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানায়।” পিটিভি আরও জানায়, “পাকিস্তান সেনারা সীমান্তের আঙ্গুর আড্ডা, বাজৌর, কুররম, দির, চিত্রাল ও বেলুচিস্তানের বাহরাম চাহ এলাকায় তালেবানদের আক্রমণের জবাব দিয়েছে।”

আসিফ আলি জারদারি

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি বলেন, "জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রমাণ করে যে আফগান ভূমি থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে।” তিনি আফগান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা যেন পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে 'কঠোর পদক্ষেপ' দেয়।

তিনি বলেন, “ভারত-সমর্থিত খারিজ সন্ত্রাসীরা আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করছে—এটি প্রমাণিত বাস্তবতা।” তিনি আরও যোগ করেন, পাকিস্তান “কখনো তার জাতীয় সার্বভৌমত্বে আপস করবে না। প্রতিটি উসকানির জবাব কঠোর ও কার্যকরভাবে দেওয়া হবে।”

তিনি সেনাবাহিনীর “সাহসী নেতৃত্ব ও পেশাদারিত্বের” প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা শক্ত হাতে রয়েছে এবং বাহিনী মাতৃভূমির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করতে জানে।”

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেন, “আফগান বাহিনীর বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকর জবাব দিয়েছে—কোনো উসকানি বরদাশত করা হবে না।”

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা প্রয়োজন তাই করবে।

জবিহুল্লাহ মুজাহিদ

আফগান সরকারের প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগান বাহিনী পাকিস্তানের ২৫টি ঘাঁটি দখল করেছে এবং ৫৮ সেনাকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া অভিযানে আরও ৩০ জন পাকিস্তানি সেনা আহত হয়েছে। 

জবিহুল্লাহ মুজাহিদ পাকিস্তানকে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এ ধরনের পদক্ষেপের নেতিবাচক পরিণতি হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকাণ্ড আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।” মুজাহিদ বলেন, আফগান বাহিনীর হাতে প্রতিরোধের যথেষ্ট অস্ত্র রয়েছে, তবে কাবুল পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত সংঘর্ষ দুই দেশের ইতোমধ্যেই উত্তপ্ত সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে। পাকিস্তান যেখানে আফগানিস্তানকে টিটিপিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করছে, সেখানে কাবুল দাবি করছে, ইসলামাবাদ আফগান সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে। ফলে পরিস্থিতি এখন দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১২