রপ্তানি পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা
শাহজালালের বিমানবন্দরে আগুনে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি: ইএবি
-
শাহজালালের বিমানবন্দরে আগুনে ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সবমিলিয়ে ১ বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)।
আজ(সোমবার ২০ অক্টোবর) এক ব্রিফিংয়ে ইএবি এ কথা জানায়। ইএবি জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১ বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় দেশের শুধু আর্থিক ক্ষতি হয়নি, দেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা উদ্বেগের। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও সুবিধা করে দেবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ক্ষতিকে শুধু পুড়ে যাওয়া পণ্যের আর্থিক মূল্য দিয়ে বিচার করা যাবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো রপ্তানিমুখী পোশাক ও ওষুধ শিল্পে, এমনকি স্থানীয় বাজারনির্ভর ব্যবসাগুলোতেও।
গত শনিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর ওই আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। এরই মধ্যে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে সরকার।

এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি অংশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধাক্কা লেগেছে। এর ফলে আসন্ন বড়দিনের বিক্রির মৌসুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি চালান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, আমদানি করা নমুনা ও উৎপাদনের উপকরণগুলো আগুনে পুড়ে যাওয়ায় বর্তমান ও ভবিষ্যতের উৎপাদন কাজ থেমে যেতে পারে। এতে পণ্য ডেলিভারিতে দেরি হতে পারে এবং অনেক অর্ডারও বাতিল হওয়ার ঝুঁকি আছে।
ঢাকার এই বিমানবন্দরের আগুন ছিল গত এক সপ্তাহে তৃতীয় বড় দুর্ঘটনা, যা ব্যবসায়ীদের বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়তি শুল্ক, ঋণের সুদ বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও দেশীয় বাজারে ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে বাণিজ্য খাত সংকটে আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন করে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার।
আমদানি কার্গো অঞ্চলে পোশাকের লেইস বা আনুষঙ্গিক সামগ্রী থেকে শুরু করে স্পেয়ার পার্টস, নতুন অর্ডারের নমুনা-সবকিছুই সংরক্ষিত ছিল। পোশাক কারখানাগুলো সময়মতো পণ্য পাঠাতে বিমান পরিবহনের ওপর নির্ভর করে। ফলে আগুনের প্রভাব তাদের জন্য আরও জটিল ও গুরুতর হয়ে উঠল।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএফএফএ) সাবেক সহসভাপতি নুরুল আমিন সতর্ক করে বলেন, 'আগুনের কারণে বিপুল পণ্য আটকে যাওয়ায় এ বছর বিমান পরিবহনের চাপ আরও বেড়ে যাবে।' তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ধর্মঘটের কারণে আগেই অনেক পণ্য শাহজালাল বিমানবন্দরে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
বড় পরিসরে প্রভাব
পোশাক শিল্পের পাশাপাশি পুড়ে গেছে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল ও টেলিকম যন্ত্রাংশ।
২০০ কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল পুড়েছে: ওষুধশিল্প সমিতি
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুনে অন্তত ২০০ কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল পুড়ে গেছে। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ৩০৭টি ওষুধ কোম্পানি আছে। এর মধ্যে ২৫০ কোম্পানি সচল আছে। আজকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ৩২ কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ২০০ কোটি টাকার বেশি কাঁচামাল পুড়ে গেছে। বাকি কোম্পানিগুলো হিসাব দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
অগ্নিনির্বাপণে বিলম্বের অভিযোগ

ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস দেরিতে সাড়া দেওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ এত ভয়াবহ হয়েছে।
সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিভিল এভিয়েশন ও ফায়ার সার্ভিস সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সমন্বয়ের ঘাটতির কারণেই এই অপূরণীয় ক্ষতি।'
আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার অভিযোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বশির উদ্দিন বলেন, 'সব দিক বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। আগুন লাগার খবর পাওয়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের দমকল বাহিনী কাজ শুরু করেছিল। ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নিয়েছিল এবং অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করেছিল ওয়াসা।'#
পার্সটুডে/জিএআর/২০