কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়!
গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বলবে জামায়াতসহ আট দল: গোলাম পরওয়ার
-
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য যে গণভোট হবে, সেখানে তাঁর দলসহ আট দল সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলবে। জনগণকেও গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।
আজ (রোববার) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত আট দল এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দল শুরু থেকেই সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারের অনেক বিষয়ে একটি দল বিরোধিতা করেছে। তাই জাতিকে সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকারও যেন আগে কী ছিল, নতুন করে কী কী সংস্কার হচ্ছে, সেটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে, প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে জানায়।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অনলাইনে একটি দলের কর্মী বাহিনী আগে থেকেই গণভোটে ‘না’-এর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে কারা সংস্কারের পক্ষে নেই, সংস্কারের বিরোধিতা করছে, জাতি তাদের চিনতে পারল। গোটা জাতি সংস্কারের পক্ষে। যারা এর বিপক্ষে যাবে, জাতি নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
আগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, তিনজন উপদেষ্টা সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন।
সেই তিনজন উপদেষ্টা কারা, সে বিষয়ে আজ জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তাঁদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আট দলের কাছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো সময়মতো সামনে আনা হবে। সরকার যেন এ বিষয়ে সজাগ থাকে। প্রধান উপদেষ্টা যেন তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখেন।
কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা অনুমোদন করেছে। প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে তা ইতিমধ্যে আইনি ভিত্তি পেয়েছে। প্রধান দলগুলোর সবাই খুশি না হলেও দৃশ্যত তারা এটি মেনেই নিয়েছে। ফলে সংস্কার নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার আপাত সুরাহা হয়েছে বলা চলে।
তবে ভবিষ্যৎ সংস্কার পুরোপুরি নির্ভর করছে গণভোটের ফলাফলের ওপর। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পরিবর্তে ‘না’ জয়ী হলে কী হবে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঐকমত্য কমিশনের নয় মাসের আলোচনা, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টা ভেস্তে যাবে? আপাতত এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও কাছেই নেই।
'না’ ভোট জয়ী হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী দল জুলাই সনদ মেনে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে না। পরবর্তী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ইচ্ছার ওপরই সংস্কার নির্ভর করবে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার’ এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি। সেই আলোকেই দলটি ভবিষ্যৎ সংস্কার এগিয়ে নিতে পারে। তা আবার জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার সঙ্গে মেলে না। অবশ্য জামায়াত জুলাই সনদের প্রায় সবগুলো সংস্কার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। গণভোটে ‘না’ জয়ী হলেও কি জুলাই সনদ মেনে সংস্কার করবে, নাকি নিজেদের মতো করে নতুন ফর্মুলা সামনে আনবে, তা সময়ই বলে দেবে।#
পার্সটুডে/জিএআর/১৬