অধীর রঞ্জন চৌধুরীর অভিযোগ
'অসমে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যার নেতৃত্বে অত্যাচার হয়েছে, মমতা তার সঙ্গে চুক্তি’ করেছেন'
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি বলেছেন, অসমে সংখ্যালঘুদের (মুসলিম) বিরুদ্ধে যার নেতৃত্বে অত্যাচার হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সঙ্গে ‘দার্জিলিং চুক্তি’ করেছেন। তিনি আজ (শনিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর বাবু বলেন, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পিছনে দার্জিলিং চুক্তি হয়েছে। এতে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুবিধা হবে। এ প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী এমপি আজ বলেন, ‘অসম থেকে (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) ‘এনআরসি’ কাণ্ডের নায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা (অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা) পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে চলে আসলেন, বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় মানুষজনকে ফেলে রেখে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের সব থেকে বড় রাজনৈতিক শত্রু রাজ্যপাল চলে গেলেন দার্জিলিংয়ে। বাংলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তিনিও চলে গেলেন দার্জিলিংয়ে। ‘তিন মাথা’ মিলছে কোথায়? দার্জিলিংয়ে। কে, কে? অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা যিনি ‘এনআরসি কাণ্ডের নায়ক’। তার নেতৃত্বে অসমে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্বিচারে অত্যাচার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। বাংলার ‘দিদি’ (মমতা) যাকে সংখ্যালঘুরা (মুসলিম) মনে করেছিল আমাদের ত্রাণকর্ত্রী, তিনি গিয়েছিলেন, সেখানে ছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেখানে ‘দার্জিলিং চুক্তি’ হয়েছে।’
তিনি বলেন, দার্জিলিং চুক্তি হল, জগদীপ ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী হলে তার বিরোধিতা না করা। সেই ‘দার্জিলিং চুক্তি’র রূপায়ন দিদি করে দিয়েছেন। দিদি বলে দিয়েছেন, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। অর্থাৎ, ওই সিদ্ধান্তের ফলে সুবিধা হবে, ধনখড় সাহেবের। ধনখড় সাহেব মানে ভারতবর্ষের মোদি সরকারের সুবিধা হবে। এ ভাবে ‘দিদি’ মোদিকে বার্তা দিয়েছেন, আমি তোমার সঙ্গে আছি, সরাসরি না পারলেও পারোক্ষভাবে আছি। দার্জিলিং চুক্তি হওয়ার পর দিদি এবার যাবেন দিল্লিতে। এবার ‘দিল্লি চুক্তি’ হবে দিদি ও মোদির সঙ্গে।’
উপরাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে প্রার্থী করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। অন্যদিকে, বিরোধী কংগ্রেস জোট থেকে প্রার্থী করা হয়েছে মার্গারেট আলভাকে। নির্বাচন হবে আগামী ৬ আগস্ট।
পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে তারা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তৃণমূলের দাবি- তাদের সঙ্গে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। কংগ্রেস অবশ্য সেই দাবি অস্বীকার করেছে। তৃণমূলের ওই সিদ্ধান্তে বিজেপির হাত শক্ত হবে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
অন্যদিকে, আজ (শনিবার) কংগ্রেস জোটের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী মার্গারেট আলভা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস, বিরোধী শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। উপরাষ্ট্রপতি পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকলে সেটা বিরোধীদের পক্ষে সহায়ক হবে না। এই সিদ্ধান্ত শাসকদলকেই সাহায্য করবে। এখনও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সময় আছে। তৃণমূল এমপিদের তাদের বিবেকবুদ্ধি অনুসারে ভোট দিতে অনুমতি দেওয়া হোক।’
এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন নারী। দেশের সামনে এই প্রথম বার এক জন নারী উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণেই আমাকে সবার সমর্থন করা উচিত।’ তৃণমূলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মার্গারেট আলভা বলেন, ‘উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। এই সময়টা অহংবোধ অথবা রাগের বিষয় নয়। এই সময়টা হচ্ছে সাহস, নেতৃত্ব এবং একতা দেখানোর সময়। আমি বিশ্বাস করি, সাহসের প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের পাশে দাঁড়াবেন।’ অবশেষে আজ শনিবারও তৃনমূলকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী কংগ্রেস জোটের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী মার্গারেট আলভা।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।