ভারতে ‘পিএফআই’ ও ইমাম কাউন্সিলসহ ৯ সংগঠন ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ
-
সম্প্রতি পিএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ১০৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই), অল ইন্ডিয়া ইমাম’স কাউন্সিলসহ ৯ সংগঠনের বিরুদ্ধে ৫ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজ (বুধবার) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এসব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের দাবি- তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী যোগসূত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার আনলফুল অ্যাক্টিভিটি প্রিভেনশন অ্যাক্ট- এর অধীনে ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার বলেছে, পিএফআই এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
পিএফআই-এর পাশাপাশি যেসব সংগঠন বা সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলো হল :
১) রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন (RIF)
২) ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (CFI)
৩) অল ইন্ডিয়া ইমাম কাউন্সিল (AIIC)
৪) ন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন (NCHRO)
৫) জাতীয় মহিলা ফ্রন্ট
৬) জুনিয়র ফ্রন্ট
৭) ইমপাওয়ার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন
৮) রিহ্যাব ফাউন্ডেশন

কেন্দ্রীয় সরকার বলছে ‘পিএফআই’ এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো বেআইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। এসব কর্মকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব সংগঠনের কার্যক্রম দেশের শান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। পিএফআই এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো দেশে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের।
২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ভারতের তিনটি মুসলিম সংগঠনকে একীভূত করে গঠিত হয়েছিল পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া। পিএফআইয়ের দাবি- তারা ২৩টি রাজ্যে সক্রিয়। স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) উপর নিষেধাজ্ঞার পরে ‘পিএফআই’ কর্ণাটক, কেরালার মতো দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে দ্রুত প্রসারিত হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) সম্প্রতি ১৫ টি রাজ্যে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার ৯৩টি স্থানে অভিযান চালায়। সন্ত্রাসী তহবিল মামলায় নেওয়া ওই পদক্ষেপে পিএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ১০৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এবং ‘ইডি’ পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিএফআই) বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। এ সময়ে দেশের ৮টি রাজ্য থেকে ১৭২ জন পিএফআই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এনআইএ দিল্লির শাহীনবাগে অভিযান চালিয়ে পিএফআই-এর সাথে যুক্ত ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে। শাহীনবাগে ওই অভিযানের পর মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী। একই সঙ্গে জামিয়া নগরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এখানে দু’মাস ধরে চার বা তার বেশি লোক জড়ো হওয়ার অনুমতি নেই। জামিয়া ইউনিভার্সিটি একটি সার্কুলার জারি করে শিক্ষার্থীদের জমায়েত না করতে বলেছে।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংস্থা ‘বন্দিমুক্তি কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ছোটন দাস আজ রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আমরা যেকোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিরোধী। সরকার কোনও সংগঠনের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ জানাতেই পারেন, কিন্তু সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়। এক্ষেত্রে সংগঠনের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শগত সংগ্রামে না এটে উঠতে পেরে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করছে। এই ধরনের নিষিদ্ধকরণ গণতন্ত্রকে দুর্বল করে, ক্ষতিগ্রস্ত করে। অবশ্য আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার তো আর গণতন্ত্রের ধার ধারে না, তারা ফ্যাসিজম কায়েম করতে চাচ্ছে। তাই বিরুদ্ধ মত, ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় সামাজিক সংগঠনের উপরে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ করব তারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে ‘পিএফআই’ এবং যেসব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা কী কী কাজে যুক্ত তা জানাতে। কখনও যদি বিরোধী সরকার ক্ষমতায় এসে আরএসএ বা তাদের কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে আমরা তারও বিরোধিতা আগাম করে রাখছি। আমরা মানবাধিকার সংগঠন, সর্বদাই নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে। একইভাবে ‘সিমি’র নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে আমরা আজও সংগ্রাম করছি। এবং সিপিআই মাওবাদী এবং তার সঙ্গে যুক্ত করে অন্য সংগঠনেরও আমরা নিষিদ্ধকরণের আজও বিরোধিতা করছি। ‘পিএফআই’ এবং তার সঙ্গে যুক্ত করে যাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারমধ্যে একটি ‘মানবাধিকার সংগঠন’ আছে তাদেরকেও নিষিদ্ধ করেছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি এবং অবিলম্বে এই নিষিদ্ধকরণের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক।’
‘সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন- গণতন্ত্রের উপরে এই আক্রমণ, এটা কোনও নির্দিষ্ট কোনও সংগঠনের উপরে নয়, এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আবান জানাচ্ছি’ বলেও মন্তব্য করেন ‘বন্দিমুক্তি কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক ছোটন দাস।
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।