ভারতে কোনো দলই চায় না, সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোনো নেতৃত্ব তৈরি হোক : ওয়াইসি
(last modified Mon, 07 Nov 2022 12:58:06 GMT )
নভেম্বর ০৭, ২০২২ ১৮:৫৮ Asia/Dhaka
  • ভারতে কোনো দলই চায় না, সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোনো নেতৃত্ব তৈরি হোক : ওয়াইসি

ভারতের মজলিশ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, কোনো দলই চায় না যে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোনো নেতৃত্ব তৈরি হোক, তাদের দাবিয়ে রাখতে চায়।

 সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের ফল প্রসঙ্গে ওয়াইসি’র দল ‘মিম’কে বিজেপির বি-টিম বলার জবাবে গণমাধ্যমে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি ওই মন্তব্য করেন। 

ওয়াইসি বলেন, ‘ভারতীয় রাজনীতিতে সমস্ত দল, যেমন বিজেপি, কংগ্রেস, ‘আপ’,  সমাজবাদী পার্টি, ‘আরজেডি’ সকলেই চায় যে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের যাতে কন্ঠ না তৈরি হয়, তাদের নেতৃত্ব তৈরি না হয়, এবং তাদের এভাবে দাবিয়ে রাখতে চায়।’  

তিনি বলেন, ‘এখানে বিজেপি হোক, কংগ্রেস হোক, ‘আপ’ হোক তারা কখনও চায় না যে, সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ একটি রাজনৈতিক স্থান পাক, তাদের ক্ষমতায়ন হোক, তারা সুবিচার পাক, তারা তাদের অংশ পাক। যেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নাম আসবে তখন তাদের বিজেপির-এ টিম ইত্যাদি বলা হবে।’  

গত ৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৬টি রাজ্যের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচন হয়েছিল হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং বিহার রাজ্যে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল ৬ নভেম্বর (রোববার)। উপনির্বাচনে ৪টিতে  বিজেপি এবং একটি করে আসনে জয়ী হয়েছে আরজেডি, টিআরএস এবং উদ্ধবপন্থি শিবসেনা।  

উপনির্বাচনে বিহারের ‘গোপালগঞ্জ’ আসনের ফল নিয়ে বিভিন্নমহলে আলোচনা চলছে। এই কেন্দ্রটিতে ওয়াইসির মজলিশ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা ‘মিম’ দল ভোট কাটায় বিহারে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান শরিক দল ‘আরজেডি’ প্রার্থী জিততে না পারায় বিজেপি এখানে জয়ী হতে পেরেছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। ওই আসনে বিজেপি প্রার্থী কুসুম দেবী ‘আরজেডি’ প্রার্থী মোহন প্রসাদ গুপ্তাকে মাত্র ১,৭৯৪ ভোটে পরাজিত করেছেন। ওই কেন্দ্রে ‘মিম’ প্রার্থী আব্দুল সালাম ভোট পেয়েছেন  ১২ হাজার ২১৪ ভোট। এভাবেই ভোট কেটে বিজেপি প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করতে ‘মিম’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বলা হচ্ছে। যদিও ওই কেন্দ্রে সাধু যাদবের স্ত্রী ইন্দিরা যাদব অর্থাৎ, উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের মামি বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং তিনি ৮,৮৫৪ ভোট পেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রটিতে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে ওয়াইসির ‘মিম’ দলকেই দায়ী করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যে প্রকাশ, ‘মিম’ এবং ‘বিএসপি’ প্রার্থী নির্বাচনে ‘আরজেডি’কে খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অন্যথায় বিজেপি আসনটি জিততে পারত না।

প্রসঙ্গত, বিহারে ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে  মুসলিম অধ্যুষিত সীমাঞ্চল এলাকায় ‘মিম’-এর পাঁচজন প্রার্থী জিতেছিল। কিন্তু চলতি  বছরের শুরুতে, ওয়াইসির  বিধায়কের মধ্যে চারজনই ‘আরজেডি’তে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ ‘আরজেডি’ দল ভাঙিয়ে ‘মিম’-এর ৪ বিধায়ককে দলে শামিল করেছিল। এবার গোপালগঞ্জ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ওয়াইসি ‘আরজেডি’র বিরুদ্ধে তার বিধায়কদের দল ভাঙানোর প্রতিশোধ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।    

গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘মিম’কে বিজেপির বি-টিম বলার অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, ‘উত্তর প্রদেশে বিজেপি জিতেছে, সমাজবাদী পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে না কেন? হরিয়ানাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কেন বলা হচ্ছে না? ‘আপ’-এর বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে না কেন? ওয়াইসির নাম আসছে কেন? কারণ, ওয়াইসি মুসলিম। কংগ্রেসের কথা উঠলে সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। ‘আপ’-এর নাম এলে বোবা হয়ে যায়। এটা ভুল। গোপালগঞ্জে বিজেপি প্রার্থী জিতেছেন, সেখানে তো ‘আরজেডি’ প্রধান লালুপ্রসাদ  যাদবের শ্যালক সাধু যাদব একসময়ে লড়েছিলেন, উনি আগে বিধায়ক ছিলেন, এমপি ছিলেন এ নিয়ে কেউ কথা বলে না। গণমাধ্যম কথা বলে না, বা আমাদের যারা প্রত্যাখ্যান করে তারাও বলে না।’   

ওয়াইসি বলেন, ‘আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, কেউ জিতবে, কেউ হারবে। গুজরাটে কংগ্রেসের ১৫/১৬ জন বিধায়ক দল ছেড়েছিলেন। ওই বিষয়ে কেউ কথা বলে না, কীভাবে তারা চলে গেলেন? কংগ্রেস দল মহারাষ্ট্রে (হিন্দুত্ববাদী) ‘শিবসেনা’র সঙ্গে জোট করেছে। তাদের ‘সেক্যুলার’ বলে দেওয়া হল। হরিয়ানাতে ‘আপ’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এখানে বিজেপি জিতেছে,  কেউ ওই বিষয়ে কিছু বলবে না। এসব থেকে একটি কথাই স্পষ্ট যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে রাখো এবং তাদের বলে দেয়া হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথা যেন না বলে, আমাদের গুলাম হয়ে থাকো। এটা ভুল। সবাই নির্বাচনে লড়ছে, আমরাও লড়ব।’  

তিনি বলেন, ‘বিহারে আমাদের বিধায়ক আছে। গত নির্বাচনে ৫ জন জয়ী হয়েছিলেন। ৪ বিধায়ককে ‘আরজেডি’ কিনে নিয়েছিল। একজন অবশিষ্ট আছে। সেই বিষয়ে কেউ কথা বলবে না। ওরা যা কিছু করবে, সেটাকে তাদের ‘কৌশল’ বলা হবে। আমরা নির্বাচনে লড়লে কেন লড়ছে প্রশ্ন তোলা হবে? আমরা কী নির্বাচনে লড়ব না? লড়াই করা উচিত আমাদের।’ ‘গণতন্ত্রের উপরে আমদের আস্থা রয়েছে, আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে, আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে। সেজন্য আমরা এসব করছি’ বলেও মন্তব্য করেন ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি।# 

           

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ