সোনিয়া গান্ধীর অভিযোগ
মোদী সরকার বিরোধীদের কণ্ঠস্বর রোধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার করছে
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেত্রী এবং ‘ইউপিএ’ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, মোদী সরকার বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন করতে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এবং অন্যান্য সংস্থার অপব্যবহার করছে।
সোনিয়া গান্ধী কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার, সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে দমন করা, মিডিয়াকে চাপ দেওয়া এবং বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
আজ (মঙ্গলবার) গণমাধ্যমে একটি নিবন্ধে এসব বিষয়ে তার বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও কৃষক ইস্যুতেও মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন সোনিয়া গান্ধী। কংগ্রেস নেত্রী বিরোধীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি ‘সিবিআই’য়ের অপব্যবহার এবং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও করেছেন।
সোনিয়া গান্ধী তার নিবন্ধে বলেছেন, মোদী সরকার পদ্ধতিগতভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভ আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগকে ধ্বংস করছে। তিনি বিরোধী ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, তার দল সংবিধান রক্ষায় সমমনা সব দলের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রস্তুত। সোনিয়া গান্ধী বলেন, বিরোধীরা বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, সামাজিক বিভাজনের মতো জনসমস্যার কথা যাতে না তুলতে পারে, সেজন্য সরকার কৌশল হিসেবে সংসদকে চলতে দেয়নি। বাজেট, আদানি কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যাতে আলোচনা না হয়, সেজন্য ক্ষমতাসীন দল সংসদে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। মোদী সরকার এমন কিছু অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাকে সরাসরি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ বলা যেতে পারে। সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সংসদের কার্যক্রম থেকে বক্তব্যের অংশ বিশেষ অপসারণ, সংসদ সদস্যদের ওপর হামলা এবং সদস্যপদ থেকে অযোগ্য ঘোষণার মতো অনেক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সোনিয়া বলেন, ৪৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট আলোচনা ছাড়াই পাস করা হয়েছিল এবং অর্থ বিল লোকসভার মাধ্যমে পাস হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী তখন তার সংসদীয় এলাকায় প্রকল্পের উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলার ৯৫ শতাংশই বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নথিভুক্ত। এ থেকে স্পষ্ট যে মোদী সরকার বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন করতে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এবং অন্যান্য সংস্থার অপব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী সত্য ও ন্যায়ের কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো তার ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার ঘটনা উপেক্ষা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মেহুল চোকসির মতো পলাতকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হয় যারা বিজেপি নেতাদের সাথে মঞ্চে থাকে। তিনি বলেন, নীরবতা পালন করে ভারতের সমস্যার সমাধান করা যাবে না।
কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী তার সরকারের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে নীরব রয়েছেন যা কোটি কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি শব্দগুলো ব্যবহার পর্যন্ত করেন না যেন এসব সমস্যাই নেই।
সোনিয়া গান্ধীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বিজেপি এবং আরএসএস নেতাদের দ্বারা উসকানি দেওয়া ঘৃণা ও সহিংসতাকে উপেক্ষা করেন। তিনি একবারও শান্তি ও সম্প্রীতি বা অপরাধকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাননি। কংগ্রেস তার বার্তা সরাসরি জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে যেমনটি ‘ভারত জোড়ো পদযাত্রা’য় করা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১১