নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা
মণিপুরে ফের সহিংসতা: অস্ত্র লুটের চেষ্টা, গুলিতে ১১ হতাহত
ভারতের বিজেপিশাসিত মণিপুরে ফের সহিংস ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে রোনাল্ডো নামে (২৭) এক যুবক নিহত হয়েছে। এছাড়া কমপক্ষে দশ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষে আধাসামরিক বাহিনীর এক জওয়ান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) একদল সশস্ত্র উন্মত্ত জনতা থৌবাল জেলায় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের একটি ক্যাম্পে হামলা চালায় এবং সেখান থেকে অস্ত্র লুটের চেষ্টা করে। এ সময় জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সশস্ত্র জনতা গুলি চাললে পাল্টা জবাবে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করলে রোনাল্ডো নামে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক নিহত হয়েছে এবং অসম রাইফেলসের একজন জওয়ান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, জনতা ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার বেশ কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে সেখানে পৌঁছাতে বাধা দেয়। কিন্তু বাহিনী কোনোমতে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এদিকে, জনতা জওয়ানদের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, জনতা অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করার জন্য খঙ্গাবক এলাকায় তৃতীয় আইআরবি ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে হামলার চেষ্টা করেছিল। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে। সশস্ত্র জনতা গুলি চালালে নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে।
অন্যদিকে, মণিপুরের প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা মঙ্গলবার বলেন, প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ভবিষ্যতে মণিপুরের জনগণকে আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রাখব। জোরামথাঙ্গা বলেন, ৩ মে থেকে মণিপুরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মণিপুরের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সেখানকার মানুষের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক আছে, তাদের কষ্টের মধ্যে ছেড়ে দিতে পারি না।
রাজ্যটিতে চলমান সহিংসতার মধ্যে আজ (বুধবার) থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হলেও নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত স্কুল-কলেজ এখন খোলা হবে না। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ত্রাণ শিবিরে বাস করছে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে নির্মিত ব্যক্তিগত বাঙ্কারগুলো সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আদিবাসী সংগঠন আদিবাসী উপজাতি নেতা ফোরাম (আইটিএলএফ) তা মানতে অস্বীকার করেছে। রাজ্যের ১৬টি জেলার মধ্যে ৫টি জেলা থেকে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন ১১টি জেলায় বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।
মণিপুরে ‘মেইতেই’ সম্প্রদায়কে শিক্ষা, চাকরিসহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য ‘তপশিলি উপজাতি’র মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হলে গত ৩ মে থেকে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতের সূচনা হয়। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সহিংসতা ৬৩ দিনে প্রবেশ করেছে। রাজ্যের পরিস্থিতি এখনও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সহিংসতায় শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে অনেকে প্রতিবেশি রাজ্যেও আশ্রয় নিয়েছেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/৫