জুলাই ১৫, ২০২৩ ১১:০৪ Asia/Dhaka
  • অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা
    অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা

ভারতে বিজেপিশাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বাজারে সবজির মূল্যবৃদ্ধির জন্য মিঞাদের তথা মুসলমানদের দায়ী করেছেন!  

গত (বৃহস্পতিবার) তিনি মুসলিমদের নিশানা করে এ ধরণের মন্তব্য করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।  প্রসঙ্গত, অসমে  কিছুদিন ধরে রাজ্য জুড়ে সবজির দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই ওই ইস্যুতে সরকারকে নিশানা করেছেন। 

এ  প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার দাবি- মিঞাদের জন্য বাজারে জিনিসের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে।  একইসঙ্গে শাক-সবজির দামে আকাশছোঁয়ার মূলেই হচ্ছে ‘মিঞা’ ব্যবসায়ীরা। গুয়াহাটির  উড়াল সেতুর নিচে, ফুটপাতে বসা ‘মিঞা’  ব্যবসায়ীদেরকে তাড়ানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এ ধরণের ‘মিঞা’ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে সরকার। রাজ্যের খুচরো বাজার অসমিয়াদের জন্য খুলবে সরকার। কারণ, অসমিয়া ব্যবসায়ীরা অসমিয়াদের কাছ থেকে বেশি দাম নেয় না।   

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ‘এআইইউডিএফ’ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি বলেছিলেন, ‘মিঞা’ ছাড়া অসমিয়ার সংজ্ঞা পূর্ণ হবে না। আজমল বলেছিলেন, ‘মিঞা’ মুসলমান ও  অসমিয়া জনগণ ভাইয়ের মতো। মুসলিম সম্প্রদায় ছাড়া রাজ্য চলতে পারে না।  

w

মিম প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি 

 

তার ওই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, গুয়াহাটির বাজার, পরিবহণ ব্যবস্থা সবটাতেই ‘মিঞা’দের দাপাদাপি। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ‘আজমল সুপার  ৪০’ কেড়ে নিয়েছে  অসমিয়ার অধিকার। তাই ‘মিঞা’দের সঙ্গে অসমিয়াদের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে জয়ী  হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজমল অসমিয়া জাতিকে অপমান করেছেন। অসমিয়াদের নিজের কর্মের মাধ্যমে এর প্রতিশোধ নেওয়া উচিত। অসমিয়ার মধ্যে গড়ে তুলতে হবে ড্রাইভার, চাষি রিকশাচালক ইত্যাদি।

বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর

এ প্রসঙ্গে আজ (শনিবার) অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এটা ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে একজন মুখ্যমন্ত্রী সংবিধানের এত উচ্চ পদে থেকেও এরকম বিভেদমূলক মন্তব্য করেই যাচ্ছেন! উনি মুখ খুললেই উনার মুখ থেকে ঘৃণ্য সব শব্দ বের হয়। বিদ্বেষমূলক শব্দ বের হয়। যারা ন্যায় বিচার করেন তাদের উচিত সেই বিষয়গুলোকে নিন্দা করা। উনার বক্তব্য নিয়ে আমাদের বেশি মাথা না ঘামানোই ভালো। ‘পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়’। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই ঊনার বক্তব্যকে দেখা উচিত।’ 
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলব, দেখুন  যদি উনার কাছে কোনও প্রমাণ থাকে যে, মিঞাদের জন্যই শাক-সবজি বা দ্রব্যমূল্যের বাড়ছে, তাহলে উনি কেন সেগুলোকে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? উনি যেহেতু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উনার সেই দায়িত্বটা আছে, জনগণের প্রতি অবশ্যই সেই দায়িত্ব আছে। মিঞারা যদি দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি ঘটায় উনি কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আমরা জোরালো দাবি জানাই তার কাছে এবং তার বাহিনীর কাছে, তার সরকারের কাছে। তারা যেন তদন্ত করে  জনগণের সামনে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করে এবং দোষীদের শাস্তি দিক। এভাবে পাগলের প্রলাপ বকে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা যেন উনি না করেন’ বলেও মন্তব্য করেন অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর।

এ প্রসঙ্গে ভারতের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল (শুক্রবার) বলেন, দেশে যাই ঘটুক না কেন সেজন্য আমাদের দায়ী করা হয়। তিনি কটাক্ষ করে বলেন,  দেশে এমন একটি গোষ্ঠীআছে, যাদের  বাড়িতে মহিষ দুধ না দিলে বা মুরগি ডিম না দিলে তার দোষও ‘মিঞা’জির ওপর চাপানো হবে। হয়তো তাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতার দোষও মিয়া ভাইয়ের ওপর  চাপানো হবে।’  

‘আজকাল বিদেশি মুসলমানদের সঙ্গে মোদীর গভীর বন্ধুত্ব চলছে। তাদের কাছ থেকে কিছু টমেটো, পালং শাক এবং আলু চেয়ে নিন ও কাজ চালিয়ে নিন’ বলেও কটাক্ষ করেছেন ওয়াইসি।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

 

ট্যাগ