মণিপুরে দুই মহিলাকে গণধর্ষণের পর নগ্ন করে ঘোরানোর অভিযোগে ব্যাপক তোলপাড়
(last modified Thu, 20 Jul 2023 10:51:19 GMT )
জুলাই ২০, ২০২৩ ১৬:৫১ Asia/Dhaka
  • মণিপুরে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    মণিপুরে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে দু’জন মহিলাকে গণধর্ষণের পর নগ্ন করে ঘোরানোর অভিযোগে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গতকাল (বুধবার) থেকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ওই বিষয়ে সোচ্চার হয়েছে। জানা  গেছে, গত ৪ মে রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায় ওই ঘটনা ঘটে। ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই ভিডিওটি তখন প্রকাশ্যে  আসেনি।  

রাজ্যের আদিবাসী সংগঠন ‘আইটিএলএফ’-এর অভিযোগ-  কুকি-জো সম্প্রদায়ের ওই দুই মহিলাকে ধান খেতে গণধর্ষণ করা হয়। তারপর তাদের নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো হয়। ওই দুই অসহায় মহিলার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। ওই ঘটনায় মহিলা কমিশন ও এসটি (তপসিলি উপজাতি) কমিশনের কাছে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে আদিবাসী সংগঠন আইটিএলএফ। ফোরামের দাবি, ওই দুই নারীই ‘কুকি উপজাতির’। আইটিএলএফ বলেছে, ভিডিওতে ভিড়কে অসহায় মহিলাদের শ্লীলতাহানি করতে দেখা যাচ্ছে। নারীরা কান্নাকাটি করছে এবং অপহরণকারীদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছে। 

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গতকাল (বুধবার) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, ‘মণিপুর থেকে আসা মহিলাদের প্রতি যৌন সহিংসতার ছবি হৃদয় বিদারক। নারী নির্যাতনের এই নৃশংস ঘটনার যতই নিন্দা করা হোক তা কম হবে। সমাজে সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে হয় নারী ও শিশুদের। মণিপুরে শান্তির প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সকলকে এক কণ্ঠে সহিংসতার নিন্দা জানাতে হবে। মণিপুরের সহিংস ঘটনায় কেন চোখ বন্ধ করে বসে আছে কেন্দ্রীয় সরকার? প্রধানমন্ত্রীজি এ ধরনের ছবি ও সহিংস ঘটনা কী তাকে বিচলিত করে না?’   

মণিপুর সফররত তৃণমূল প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এমপি বলেছেন, ‘মহিলাদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। সংসদের অধিবেশনে আমরা বিষয়টি তুলব।’ 

গতকাল রাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে বলা হয়েছে,  ‘মণিপুরের রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া সেই দৃশ্য। যেখানে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের উপর এক দল পুরুষ যৌন নির্যাতন করছে। মণিপুরে তথ্যানুসন্ধানী দল এবং কমিশন পাঠাতে কেন্দ্রকে কে বাধা দিচ্ছে? নারী এবং শিশুকল্যাণ মন্ত্রী এখনও চুপ কেন?’ 

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা মণিপুরকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে গেছে। মণিপুরে ভারতের ভাবধারা আক্রান্তের ঘটনায় ‘ইন্ডিয়া’ (নবগঠিত বিজেপি বিরোধী জোট) চুপ করে থাকবে না। আমরা মণিপুরের মানুষের পাশে আছি। শান্তিই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ।’    

কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলট বলেছেন, ‘মণিপুর থেকে আসা নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ছবি হৃদয় বিদারক। এ ঘটনা মানবতার জন্য লজ্জাজনক, নিন্দনীয়। সহিংসতার আগুনে পুড়ে যাওয়া মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হৃদয়হীন ও সংবেদনশীল মনোভাব লজ্জাজনক।’

অন্যদিকে, বুধবার গভীর রাতে কেদ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, ‘দুই মহিলার উপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের সাথে কথা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ঘটনার ন্যায়বিচার হবে।’

মণিপুর পুলিশ বলেছে, অপহরণ, বিবস্ত্র করে হাঁটানো, গণধর্ষণ এবং হত্যার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিজেপিশাসিত রাজ্যটিতে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি  জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়োসহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠন তার  বিরোধিতায় মাঠে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সহিংসতার সূত্রপাত হয় সেখানে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে দু’শো মানুষ নিহত এবং ৫০ হাজারের বেশি গৃহহীন হয়েছেন বলে জানা গেছে।#

 

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/১৯   

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।