জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে মহররমের শোক মিছিলে মানুষের ঢল
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে ঐতিহ্যবাহী মহররমের শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরকার কমপক্ষে ৩৩ বছর পর শ্রীনগর শহরের গুরুবাজার থেকে ডালগেট পর্যন্ত মহররমের শোক মিছিল বের করার অনুমতি দেওয়ায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে বিপুল সংখ্যক মানুষজন শামিল হন। ৮ই মহররম (বৃহস্পতিবার) আজাদারি মিছিল বের করেন শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এর আগে গত (বুধবার) নগরীতে ৭ই মহররমের মিছিল বের করা হয়।
কর্মকর্তারা ব্যস্ততম লাল চক এলাকা দিয়ে যাওয়া সড়কে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মিছিলের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এ কারণে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে গুরুবাজারে জড়ো হতে থাকেন শোকার্তরা।
কাশ্মীর পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক বিজয় কুমার বলেন, মিছিলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে শিয়া সম্প্রদায়ের দাবি ছিল এই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হোক। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমরা এ জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি।’

এক কর্মকর্তা বলেন, মিছিলের অনুমতি দেওয়ার প্রশাসনের সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানের শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি প্রশাসনকে অন্যান্য বিষয়েও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। কাশ্মীরের জনগণ এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যা প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে।
শিয়া নেতা ইমরান রাজা আনসারি বলেন, তিনি সব সময়ে বলেছেন যে শান্তিপূর্ণ মুহররমের মিছিলের অনুমতি দেওয়া উচিত কারণ, শোকার্তদের কোনও রাজনৈতিক বা অন্য এজেন্ডা নেই। আয়োজকদের কাছে প্রশাসনের শর্ত ছিল কোনও দেশবিরোধী, সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গোষ্ঠীকে উত্থাপন করা যাবে না। শোক পালনকারীরা নির্ধারিত শর্ত মেনে শুধু ধর্মীয় স্লোগান দেন।

জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা হজরত ইমাম হোসেন (আ.) এবং কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে এক বার্তায় বলেন, ‘আমি কারবালার শহীদদের প্রতি প্রণাম করছি এবং হজরত ইমাম হোসেন (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আদর্শকে স্মরণ করছি। তিনি আরও বলেন, সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, স্বাধীনতা, ভালোবাসা, মমতা ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সরকারের অঙ্গীকার ও দৃঢ়তা আজ সারা বিশ্ব দেখছে। এটি শান্তির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্নিশ্চিত করতে করার এবং জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করার একটি উপলক্ষ।
প্রসঙ্গত, শ্রীনগরে ১৯৮৯ সাল থেকে শিয়া মুসলিমদের আজাদারি মিছিল নিষিদ্ধ। বলা হয় ১৯৮৯ সালে একটি বড় শোক মিছিলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ঢুকে পড়ে এবং সে সময়ে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যা দেখে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহন এটি নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আজ (শুক্রবার) পশ্চিমবঙ্গের ‘সত্যের পথে’ পত্রিকার সম্পাদক সেখ মুস্তাক আহমদ আজ রেডিও তেহরানকে বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) শ্রীনগরে মহররমের অষ্টম দিনে ভারত সরকার যে অনুমতি দিয়েছে ইমাম হোসেন (আঃ)-এর শোক মিছিলের, এটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করছি। আজকের এই গোটা বিশ্বের পরিস্থিতিতে এটা আমাদের কাছে একটি ভালো বার্তা। ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা চাই এভাবে যেখানে যেখানে ইমাম হোসেনের মিশন এবং তার যে উদ্দীপনা, তার যে চেতনা বা আশুরা বিপ্লব, যে মিশন নিয়ে গোটা বিশ্বে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য সব সরকারকেই আমরা বলব তারা যেন ইমাম হোসেনের মিশনে না বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর আগে আমরা দেখেছি যেখানে যেখানে ইমাম হোসেনের মিশনে বাধা হয়েছে, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইমাম হোসেনকে কেন্দ্র করে মানুষের যে আবেগ বা ধর্মীয় অনুভুতি জড়িত আছে সেটা সাময়িক ক্ষুন্ন হলেও এই মিশন কোনোদিন থামেনি। ১৪০০ বছর হতে চলল, কিন্তু কারবালার সেই ঘটনা যেন গতকাল ঘটেছে, এমন চেতনা নিয়েই মানুষ উজ্জীবিত হয়ে আছে।’
#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২৮