মণিপুরে ফের সহিংসতা, সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত ৩
ভারতে বিজেপিশাসিত মণিপুরে ফের সহিংস ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছে।
রাজ্যটিতে ‘মেইতেই ’সম্প্রদায়কে ‘তপসিলি উপজাতি’ মর্যাদা দেওয়ার তৎপরতার বিরুদ্ধে ‘কুকি’ এবং অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায় এর বিরোধিতায় মাঠে নামলে গত ৩ মে থেকে সহিংসতা চলছে।
গত (মঙ্গলবার) ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘বিগত কিছুদিন ধরে সে রাজ্যে শান্তি ফিরেছে। দেশ মণিপুরের সঙ্গে আছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার মিলে সেই শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করবে।’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের মন্তব্যের মাত্র দিন চারেকের মধ্যেই ফের সেখানে সহিংস ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
আজ (শুক্রবার)ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উখরুলের লিটনের কাছে থোয়াই কুকি গ্রামে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে ওই গ্রামের ৩ জন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছে। আজ কুকি সম্প্রদায়ের সংগঠন ইনডিজেনাস ট্রাইবাল লিডার্স ফোরাম (আইটিএলএফ)-এর একজন মুখপাত্রের বক্তব্য, মেইতেই জনগণের হামলায় জামখোগিন (২৬) থাংখোকাই (৩৫) এবং হ্যালেনসন (২৪) নিহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, আজ ভোরে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর পুলিশ আশেপাশের গ্রাম ও জঙ্গলে তল্লাশি চালায়। যেখান থেকে তারা তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। তিনজনেরই শরীরে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তাদের হাত-পা কাটা ছিল। উখরুলের এসপি নিঙ্গশেম ওয়াসুম বলেন, নিহত ব্যক্তিরা গ্রামের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কয়েকজন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত গ্রামে ঢুকে গ্রামের পাহারাদার এই তিনজনকে গুলি করে। তিনি আরও বলেন, গ্রামটি প্রত্যন্ত এলাকায়। নিকটতম নিরাপত্তা চৌকিটি এখান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে, তাই ঘটনার সময় সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না।
এদিকে, মণিপুরে চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে আজ রাজ্যের মন্ত্রী ও মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কুচবিহারে এক প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। তিনি এ সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। মণিপুরে সম্প্রতি দু’জন নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানোর ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে তোলপাড় ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে ক্ষুব্ধ মানুষজন।
এ প্রসঙ্গে আজ রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখিনি। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ভারতবর্ষ আগে দেখেনি, সারা বিশ্বও আগে দেখেনি। তার বিরুদ্ধে আমরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জেলায় প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
গত (বুধবার) ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেছিলেন, মণিপুরে ৬ হাজার আধুনিক অস্ত্র এবং লুট হওয়া ছয় লাখ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত শান্তি আসবে না। এই অস্ত্র এবং গোলাগুলি নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে লুট করা হয়েছিল এবং তা রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের উপর ব্যবহার করা হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন গৌরব গগৈ। তার এ ধরণের মন্তব্যের একদিন বাদেই ফের সেখানে সহিংস ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এলো। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।