দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের বিদ্বেষ বক্তব্য, মাইক বন্ধ করল পুলিশ
https://parstoday.ir/bn/news/india-i127096
ভারতের রাজধানী দিল্লির যন্তর মন্তরে উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের একটি মহাপঞ্চায়েত (সমাবেশ) দিল্লি পুলিশ মাঝপথে বন্ধ করে দিয়েছে।
(last modified 2025-07-09T12:00:31+00:00 )
আগস্ট ২১, ২০২৩ ১৩:২৯ Asia/Dhaka
  • দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের বিদ্বেষ বক্তব্য, মাইক বন্ধ করল পুলিশ

ভারতের রাজধানী দিল্লির যন্তর মন্তরে উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের একটি মহাপঞ্চায়েত (সমাবেশ) দিল্লি পুলিশ মাঝপথে বন্ধ করে দিয়েছে।

গতকাল (রোববার) সেখানে বক্তারা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে পুলিশ ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পুলিশ জানিয়েছে তারা একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছিলেন যার পরে তাদের স্পিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদেরকে যন্তর মন্তর ছেড়ে যেতে বলা হয়। যদিও এখনও এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি। 

মহাপঞ্চায়েতের সময় হরিয়ানার মেওয়াতে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, দশনা দেবী মন্দিরের পুরোহিত ইয়াতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী উপস্থিত লোকজনকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে, একজন অ-হিন্দু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন।’   

জানা গেছে, অল ইন্ডিয়া সনাতন ফাউন্ডেশন এবং হিন্দু সেনা হরিয়ানার নূহতে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে একটি মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করেছিল। এতে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু সেনার জাতীয় সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তা, হিন্দু রক্ষা দলের পিঙ্কি চৌধুরী, দশনা দেবী মন্দিরের পুরোহিত ইয়াতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী ও অন্যরা।        

মহাপঞ্চায়েতের সময় হরিয়ানার মেওয়াতে সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে দাসনা দেবী মন্দিরের পুরোহিত ইয়াতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী মুসলিমদের নিশানা করে বলেন, 'পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে একজন অহিন্দু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন! আপনাকে জিহাদ করতে হবে, যদি আপনি মুসলমানের মত আচরণ না করেন তবে আপনার নিজের জন্য কোনো জমি থাকবে না এবং আপনাকে ভারত মহাসাগরে ডুবতে হবে।’

তিনি যখন তার বক্তব্য শেষ করছিলেন, তখন দু’জন কর্মকর্তা তার কাছে এসে তাকে থামতে অনুরোধ করেন। ‘হিন্দু সেনা’র জাতীয় সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তা বলেন,  ‘গত মাসে মেওয়াতে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছিল কিন্তু জিহাদিদের একটি দল পাথর নিক্ষেপ ও গুলি ছুড়ে সেটিকে আক্রমণ করেছিল। এরফলে অনেক হিন্দু ভাই নিহত এবং অন্যরা আহত হয়। কেন এই জিহাদিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সেখানে একটি (আধাসামরিক বাহিনী) ‘সিআরপিএফ’ক্যাম্প স্থাপন করা হয়নি?’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ আমাদের এখানে ঘিরে রেখেছে কেন? আমরা ভুক্তভোগী এবং আমাদের কথা বলার সুযোগ পাওয়া উচিত। কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল কিন্তু আমি মনে করি এটা অসম্পূর্ণ ছিল, যতদিন এদেশে মুসলমান থাকবে ততদিন বিভাজন শেষ হবে না।’     

‘হিন্দু সেনা’র জাতীয় সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তা যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন  অতিরিক্ত ডিসিপি (নয়াদিল্লি) হেমন্ত তিওয়ারি তার কাছে এসে তার মাইক নিয়ে নেন। তিনি জনতাকে বলেন, ‘আয়োজকদের বলা হয়েছিল অন্য কোনও  সম্প্রদায়/গোষ্ঠী সম্পর্কে কিছু না বলতে, আমাদের বারবার অনুরোধ করার পরেও আপনারা আমাদের কথা শোনেননি, তাই এই মহাপঞ্চায়েত এখন শেষ, দয়া করে আপনারা এখান থেকে যান। আমরা আপনাদেরকে বলেছিলাম অন্য সম্প্রদায়ের নাম না করতে।’ আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আপনাদেরকে যে সময় দেওয়া হয়েছিল তাও শেষ। দয়া করে এখান থেকে চলে যান।

জানা গেছে, পুলিশ প্রথমে মহাপঞ্চায়েতের অনুমতি দিয়েছিল এবং ১০০ জনকে বসতে এবং বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের পর তাদেরকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিশ্বহিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় নূহতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময়ে গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সহিংসতার জেরে মসজিদের একজন ইমাম সাহেব, ২ জন হোমগার্ডসহ ৬ জন নিহত হন। নূহে সহিংসতার পরে, পুলিশ এ পর্যন্ত ৬০ টি এফআইআর নথিভুক্ত করাসহ ২৪২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার নামে নূহে অনেক মুসলিমের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। #  

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।