চন্দ্রযান-৩ : ভারতে উৎসবমুখর পরিবেশ, রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
https://parstoday.ir/bn/news/india-i127244-চন্দ্রযান_৩_ভারতে_উৎসবমুখর_পরিবেশ_রাজনৈতিক_মহলে_প্রতিক্রিয়া
ভারতের চাঁদ মিশন চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ যারা এই জায়গায় পৌঁছেছে।
(last modified 2025-11-11T14:44:42+00:00 )
আগস্ট ২৪, ২০২৩ ১৮:০৪ Asia/Dhaka
  • চন্দ্রযান-৩ : ভারতে উৎসবমুখর পরিবেশ, রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া

ভারতের চাঁদ মিশন চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ যারা এই জায়গায় পৌঁছেছে।

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিট নাগাদ চাঁদের মাটিতে নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর সারা দেশে উৎসবের মেজাজ। আতশবাজি পুড়িয়ে ভারতের সাফল্য উৎযাপনে মেতেছেন সাধারণ মানুষ। আবেগে ভেসেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় জনগণ ঢোল বাজিয়ে এবং আতশবাজি পুড়িয়ে এটি উদযাপন করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও এতে শামিল হয়েছিলেন।

এদিকে, ওই ইস্যুতে রাজনৈতিক মহল থেকে নেতাদের প্রতিক্রিয়া এসেছে।   চন্দ্রযান-৩-এর সফট ল্যান্ডিংয়ের সাফল্যের কৃতিত্ব প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। নেতারা এ ব্যাপারে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি  তাদের দলের শাসনামলের সময়ে সম্ভব হওয়া অর্জনের সাথে যুক্ত করে উপস্থাপন করছেন। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই সাফল্যে সমগ্র মানবতার। ভবিষ্যতের অভিযানে অন্য দেশগুলোও এর ফলে উপকৃত হবে। তিনি বলেন, চাঁদের পর এবার সূর্যের অভিযানে শিগগিরি আদিত্য এল-১ উৎক্ষেপণ করবে ইসরো। শুক্রগ্রহে পাড়ি দিতে হবে আরও একটি অভিযান। আর আছে গগনযান। এর মাধ্যমে মহাকাশে অভিযাত্রী পাঠাবে ভারত।

‘ইসরো’ প্রধান এস সোমনাথ বলেছেন, আদিত্য এল-১ শিগগিরি সূর্যাভিযানে পাড়ি দেবে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গগনযান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে।

বিজেপির ফায়ারব্রান্ড নেতা ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, চন্দ্রযান-৩ এর সফল সফট ল্যান্ডিং নতুন ভারতের ক্ষমতা এবং শক্তির একটি শক্তিশালী প্রদর্শন। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং নির্দেশনায় ইসরো বিজ্ঞানীরা যা করেছেন তা আর কেউ করতে পারেনি।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা দেখে পণ্ডিত নেহেরু (ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের  তৎকালীন নেতা) ইসরোর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তার দূরদর্শিতার ফলেই আজ ভারত সারা বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়ছে।  

কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ‘চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য প্রত্যেক ভারতীয়ের সম্মিলিত সাফল্য। এটা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়। ১৪০ কোটি ভারতীয় আজ তাদের ছয় দশকের পুরনো মহাকাশ কর্মসূচিতে আরও একটি কৃতিত্বের সাক্ষী।’  
কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘আমরা আমাদের বিজ্ঞানী, মহাকাশ প্রকৌশলী, গবেষক এবং এই মিশনকে সফল করার সাথে জড়িত সকলের নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম এবং উত্সর্গকে অভিনন্দন জানাই।’ কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে তার অভিনন্দন বার্তায় আরও বলেন, ‘এই অর্জনগুলো (ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের  তৎকালীন নেতা) পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর দৃষ্টিভঙ্গির সাক্ষ্য, যিনি জোর দিয়েছিলেন যে শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক মেজাজ একটি স্বাধীন জাতির উন্নয়নের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’ 

কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এমপি বলেছেন, ‘আজকের অগ্রণী কৃতিত্বের জন্য টিম ‘ইসরো’কে অভিনন্দন। চাঁদের অজানা দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩-এর নরম অবতরণ আমাদের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কয়েক দশকের অসাধারণ প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফল। ১৯৬২ সাল থেকে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছে এবং নতুন স্বপ্নদর্শীদের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে।     

কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ১৯৬২ সালে শুরু হওয়া ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি আজ চন্দ্রযান-৩ এর আকারে একটি নতুন উচ্চতা স্থাপন করেছে। ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচির এই গৌরবময় যাত্রায় গোটা দেশ আজ গর্বিত।

শফিকুর রহমান বার্ক

চন্দ্র অভিযান প্রসঙ্গে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বার্ক তিনি বলেন, এ দেশের উন্নতিতে হিন্দু-মুসলিম সবার হাত রয়েছে। এ সময়ে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালামের কথা উল্লেখ করেন।

শফিকুর রহমান বার্ক এমপি বলেন, এই দেশকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে হিন্দু-মুসলমান সবার হাত রয়েছে। ভারতে বসবাসকারী সকল মানুষ চায় আমাদের দেশ উন্নতি করুক। তিনি বলেন, ড. এপিজে আব্দুল কালাম এদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তিনি দেশের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীও ছিলেন, যার তত্ত্বাবধানে ভারত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে। তিনি বলেন, এ সব এপিজে আবদুল কালামের চিন্তাভাবনা। বিজ্ঞান হোক বা অর্থনীতি, এই সব বিষয়ে দেশ এগিয়ে গেলে গোটা দেশ উপকৃত হবে।  

উল্লেখ্য, এপিজে আব্দুল কালামের পরামর্শে বদলে গিয়েছিল ভারতের প্রথম চন্দ্রযানের নকশা। চন্দ্রপৃষ্ঠে না নামলেও চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে অসংখ্য ছবি পাঠিয়েছিল চন্দ্রযান-১। ৩ হাজার ৪০০ পাক ঘোরার পর শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের আগস্টে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে  গিয়েছিল ‘ইসরো’র। চন্দ্রযান-১ তৈরির কাজ চলার সময় ‘ইসরো’র দফতর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে প্রমাণ হবে চন্দ্রযান-১ সত্যিই চাঁদের কক্ষপথে ঘুরেছে? ইসরোর বিজ্ঞানীদের জবাব ছিল, চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি পাঠাবে এই যান। কিন্তু কালামের বক্তব্য ছিল, সেটা পর্যাপ্ত নয়। তার পরামর্শ ছিল, চন্দ্রযানের সঙ্গে এমন একটি ডিভাইস পাঠানো হোক, যেটি কক্ষপথে ঘোরার সময় চাঁদের মাটিতে ফেলা হবে। কালামের সেই পরামর্শ মেনেই চন্দ্রযান-১-এর নকশা বদলানো হয়েছিল। পরে প্রথম চন্দ্রযানের ছবি দেখে খুশি হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। বলেছিলেন, প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্ববোধ করা উচিত। 

‘এনসিপি’ নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, ‘এটি স্পষ্টতই ইসরো-এর সাফল্য৷ আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বিজ্ঞান ও এর অগ্রগতি সম্পর্কে বলেছিলেন  ভারতের একটি বৈজ্ঞানিক মেজাজ থাকা উচিত৷ আমি মনে করি, এটি সরকারের চেয়ে ইসরো’র সাফল্য বেশি৷’   

অন্যদিকে, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আজ ‘ইসরো’ কেন্দ্রে পৌঁছে তিনি  ‘ইসরো’ প্রধান এস সোমনাথকে পাগড়ি পরিয়ে অভিনন্দন জনিয়েছেন। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/২৪  

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।