গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা চলছে
দিল্লিতে ইসরাইলি বর্বরতার সমর্থনে পোস্টার ও মিছিল; ফিলিস্তিনের সাথে বামপন্থীদের সংহতি
ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলা ও আগ্রাসনের মধ্যে ভারতে একাধিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসরাইলের সমর্থনে পোস্টার লাগিয়েছে এবং মিছিল করেছে।
‘হিন্দু সেনা’ নামে একটি সংগঠন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা এবং ভারতে ফিলিস্তিনি দূতাবাস বন্ধ করা। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দিল্লির তিনমূর্তি হাইফা চকে পোস্টার লাগানো হয়েছে। ‘হিন্দু সেনা’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেভাবে ১৯১৮ সালে হিন্দুরা ইসরাইলকে সাহায্য করেছিল এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ও তুর্কি সেনাদের কাছ থেকে হাইফাকে মুক্ত করেছিল, একইভাবে প্রয়োজনে হিন্দুরা আবারও ইসরাইলের হয়ে লড়াই করবে।
হিন্দু সেনাপ্রধান বিষ্ণু গুপ্তার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা এবং ভারতে ফিলিস্তিনি দূতাবাস বন্ধ করা। ভারতে ফিলিস্তিনি সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আজ (সোমবার) সিপিআই (এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সমাজবাদী পার্টির এমপি জাভেদ আলি খান, জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণিশঙ্কর আইয়ার এবং বিএসপি এমপি দানিশ আলী ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে নয়াদিল্লিতে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে যান। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, আমরা এখানে সংহতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে এসেছি। আমরা চাই শান্তি বিরাজ করুক।পরে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিপিআই (এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এখানে এসেছি। বর্তমানে আমরা সবাই জানি যে ৭ অক্টোবর যা হয়েছে, তার পর তা থেমে নেই। গাজায় এখন যা ঘটছে তা প্রকাশ্যে ঘোষিত গণহত্যার চেয়ে কম কিছু নয়। সেখানে দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না। গাজায় নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। আর কেউ নয়, নিরীহ ফিলিস্তিনিরা এই যুদ্ধের শিকার হচ্ছে। আমরা চাই সেখানে শান্তি বিরাজ করুক।'
অন্যদিকে, বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌতে ইসরাইলের সমর্থনে মিছিল করেছে ‘সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভা’। হিন্দু মহাসভার কর্মকর্তারা বলেছেন, এবার দশেরার (উৎসব)দিনে ভারতে বসবাসকারী মানুষদের রাবণের কুশপুত্তলিকা নয়, মৌলবাদীদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো উচিত। হিন্দু মহাসভার জাতীয় মুখপাত্র শিশির চতুর্বেদীর মতে, সারা বিশ্বে যেভাবে ইসলামী মৌলবাদীদের সন্ত্রাস বাড়ছে তাতে ভারতে বসবাসকারী লোকদের রাবণের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর পরিবর্তে দশেরায় মৌলবাদীদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো উচিত।
‘হিন্দু মহাসভা ইসরাইলের সঙ্গে রয়েছে। কারণ, ইসরাইল সবসময় ভারতকে সাহায্য করেছে।কারগিল যুদ্ধেও তারা আমাদের সাহায্য করেছিল। সে সময় আমেরিকাও পিছু হটেছিল।আমরা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য পুজো-পাঠ করছি’ বলেও মন্তব্য করেছেন হিন্দু মহাসভার জাতীয় মুখপাত্র শিশির চতুর্বেদী।

বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশের গোয়ালিয়রে হিন্দুত্ববাদী একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে এবং যানবাহনের পিছনে ইসরাইলের সমর্থনে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। রাজ্যটিতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বর্তমানে আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনও প্রচারণা চালানো এবং পোস্টার ইত্যাদি লাগানো বিধিভঙ্গের শামিল বলে মনে করছেন ওয়াকিফহাল মহল। ক্রান্তিকারি হিন্দু দলের সদস্য প্রবীণ চৌধুরীর দাবি- তারা কোনও রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছেন না। ইসরাইলে হামলার পর তারা কেবল তাদের সমর্থনে মনোবল বাড়ানোর কাজ করছেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা ইসরাইলের সমর্থনে যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন পোষ্টে এদের একটা বড় অংশই হিন্দুত্ববাদী এবং ‘মুসলিম-বিরোধী’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইহুদিবাদী ইসরাইলে হামাসের হামলার পরেই যার পোষ্ট বেশ ভাইরাল হয়েছিল, নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবী করা সেই চন্দন শর্মা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন তিনি ‘ইসরাইলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রত্যেকটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরাইলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে। হিন্দুরা, আপনারা কী প্রস্তুত আছেন? ইসরাইলের সাথে ১০০ কোটি হিন্দু আছে বলেও দাবি চন্দন শর্মার। তার পর থেকে এ ধরণের আরও পোষ্ট দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।
ওই ইস্যুতে সাবেক কম্যান্ডো ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন চক্রবর্তীর কথায়, ‘এই যুদ্ধে যেতে চাই ইত্যাদির কোনও অর্থ হয় না। সেখানে মিসাইল, রকেট এসব ব্যবহৃত হচ্ছে। তার মুখে দাঁড়াতে পারবে এরা? সামাজিক মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক-ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলছে এরা। যুদ্ধ করার যদি শখই থাকে, তাহলে সেনাবাহিনীতে তো অগ্নিবীর নেওয়া হলো। ভারতীয় বাহিনীতেই যোগ দিতে পারত বলেও মন্তব্য করেন দীপাঞ্জন চক্রবর্তী। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।