গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসঙ্ঘে ভোটাভুটিতে অংশ নিল না ভারত!
https://parstoday.ir/bn/news/india-i129958-গাজায়_যুদ্ধবিরতির_আহ্বানে_জাতিসঙ্ঘে_ভোটাভুটিতে_অংশ_নিল_না_ভারত!
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিতে ভারত বিরত থাকায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
(last modified 2025-11-11T14:44:42+00:00 )
অক্টোবর ২৮, ২০২৩ ১৭:৪৬ Asia/Dhaka
  • মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি
    মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিতে ভারত বিরত থাকায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ওই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত রকেট হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় ইহুদিবাদী ইসরাইল নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে। এরফলে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। ইসরাইলের বর্বর হামলায় প্রত্যেকদিনই বেড়ে চলেছে মৃত্যু মিছিল। কার্যত চরম মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। কোনো কোনো মহল থেকে একে গণহত্যা বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘে ভোটাভুটিতে বিরত থাকল ভারত। মানবিক সহায়তার কারণে গাজা ভূখণ্ডে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব পাশ হয়েছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। আরব দেশগুলোর পক্ষে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল জর্ডান। ওই প্রস্তাবে নিরীহ নাগরিকদের নিরাপত্তাপ্রদান করা থেকে তাদের মানবাধিকার রক্ষার কথা বলা হয়। ভোটাভুটি শুরু হলে, প্রস্তাবের সক্ষে ১২০টি দেশ ভোট দেয়। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ১৪টি দেশ। ভোটদান থেকে বিরত থাকে ৪৫টি দেশ, যার মধ্যে অন্যতম ভারত।

জর্ডানের ওই প্রস্তাবের সঙ্গে ‘হামাসের আক্রমণের’ প্রসঙ্গ সংযোজনের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিল কানাডা। ভারতের পক্ষ থেকে এটি সমর্থন করা হলেও সংশোধনী প্রস্তাবটি অবশ্য ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায়। ভারতের পক্ষে সাফাই দেওয়া হয়, ওই প্রস্তাবের কোথাও সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ নেই। কিন্তু গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকা উচিত নয় বলে জানায় ভারত।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী

জাতিসংঘে ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা প্যাটেল ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলাকে মর্মান্তিক বর্ণনা করে বলেন, ওই হামলা নিন্দনীয়। ভোটের বিষয়ে ভারতের ব্যাখ্যায় হামাসের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ক্ষতিকারক এবং কোন সীমানা, জাতীয়তা বা জাতি হয় না। যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের দিকে বিশ্বকে মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়। আসুন আমরা মতভেদ বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের পন্থা অবলম্বন করি। 

এদিকে, ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের প্রধান বিরোধী সল কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার বক্তব্য- 'চোখের বদলা চোখ হলে, গোটা দুনিয়া অন্ধ হয়ে যাবে, বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। আমি স্তম্ভিত এবং লজ্জিত যে আমাদের দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতির সপক্ষে ভোটদান থেকে বিরত থাকল। অহিংসা এবং সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই নীতি মেনেই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, দেশের সংবিধানে জাতীয়তাবাদের ব্যাখ্যাও তার উপর ভিত্তি করেই।’ 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী আরও বলেন, 'নির্দিষ্ট কোনও অবস্থান না নিয়ে, নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা, চোখের সামনে মানবাধিকার খর্ব হতে দেখা, খাদ্য, পানি, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ পরিসেবা থেকে লাখ লাখ মানুষকে বঞ্চিত হতে দেখা, ফিলিস্তিনের লাখ লাখ নারী পুরুষ, শিশুর অস্তিত্ব মুছে যাওয়া নীরবে দেখে যাওয়া আমাদের দেশের এযাবৎকালীন অস্তিত্বের পরিপন্থি।’

মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার বলেছেন, ‘ফিলিস্তিন নিয়ে ভারত সরকার বোধহয় ধন্দে রয়েছে। বরাবর ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে এসেছে ভারত, ইসরাইলকে নয়। দৈনিক হাজার হাজার মানুষ ফিলিস্তিনে মারা যাচ্ছেন। ভারত কখনও একে সমর্থন করেনি এতদিন। তাই বর্তমান সরকার বোধহয় ধন্দে পড়েছে।’ 

মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এক বার্তায় বলেছেন, ‘ইসরাইল গাজায় ৭০২৮ জনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু এবং ১৭০০ নারী। গাজার অন্তত ৪৫ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে।’  তিনি আরও বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নয়, মানবিক সমস্যা। ভারত কেন জনগণের জীবনের সাথে সম্পর্কিত ইস্যুতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল? গাজায় সাহায্য পাঠানোর পর কেন বিরত? বিশ্বগুরু একবিশ্ব এক পরিবারের কী হল  বলেও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছেন ‘মিম’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি।    

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।