রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচি
‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কোনো দলের শামিল হওয়া উচিত নয়: মুসলিম লীগ
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বহুলালোচিত রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচিতে ধর্মনিরপেক্ষ কোনো দলের শামিল হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ।
আগামী ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ওই কর্মসূচির মুখ্য ব্যক্তিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনিই রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেক বিরোধী নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে রাম মন্দির ট্রাস্ট।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা I.N.D.I.A. জোটের অন্যতম শরিক দল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ(আইইউএমএল), কংগ্রেস নেতাদের আমন্ত্রণে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। গতকাল (বুধবার) মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক পিএমএ সালাম বলেন, কংগ্রেসের এ বিষয়ে চিন্তা করার এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের একটি দৃঢ় অবস্থান রয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে বিজেপির এই কর্মসূচি বা কোনও এজেন্ডায় জড়ানো উচিত নয়। তিনি বলেন, সমস্ত নির্বাচনের আগে বিজেপি কোনও না কোনও কৌশল নিয়ে বেরিয়ে আসে এবং এটি আমাদের দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার এজেন্ডা। বিজেপি অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে এবং তাদের ফাঁদে কংগ্রেস দলের পড়া উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ হল কেরালা রাজ্যে কংগ্রেসের প্রধান মিত্র দল। তারা বলেছে, এই সমস্ত ইস্যুতে I.N.D.I.A. জোটের অবস্থান পরিষ্কার হবে এবং তারা এটি নিয়ে বসে আলোচনা করবে। আমরা সবাই মিত্র। মুসলিম লীগ নেতা পিএমএ সালাম বলেন, আমরা মন্দির বা মসজিদ নির্মাণে কংগ্রেসকে সহযোগিতা করছি না। এটা রাজনীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি।
বিজেপিকে টার্গেট করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল বিষয়টি সর্বজনবিদিত। এমনকি এখনও তাদের মনোভাব সাম্প্রদায়িক অনুভূতিকে কাজে লাগানো। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হল বিজেপির কোনো এজেন্ডায় ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর আসা উচিত নয়।
জানা গেছে, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী রাম মন্দির ট্রাস্ট থেকে ওই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। কিন্তু দলের নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন কী না তা কংগ্রেসের তরফে এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। এছাড়া বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবকেও ডাকা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
রাম মন্দির ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বাম দলের নেতাদের ডাকা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ওই কর্মসূচিতে শামিল হবেন না। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এখনও আমন্ত্রণ পাননি। দলের নেতা ডিম্পল যাদব অবশ্য বলেছেন, আমন্ত্রণ পেলে তিনি অবশ্যই অযোধ্যায় যাবেন। আমন্ত্রণ না পেলে পরে ভগবানের দর্শনে যাবেন বলেও মন্তব্য করেছেন ডিম্পল যাদব।
সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ধর্ম প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত পছন্দ। আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির তাদের বিশেষ ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকারকে সম্মান করি এবং রক্ষা করি। কিন্তু, রাষ্ট্র নির্দিষ্ট কোনও ধর্মকে চিহ্নিত করে না। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং সাংবিধানিক পদে থাকা অন্যদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রের দ্বারা অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের সরাসরি রাজনীতিকরণ যা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই, এই পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে আমি দুঃখিত।’
সিপিএমের সিনিয়র নেত্রী বৃন্দা কারাতের মতে, সিপিএম ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করে। কিন্তু ধর্মের রাজনীতি করা ঠিক নয়। আমাদের দল অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। আমরা ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করি। কিন্তু তারা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করছে।’
সিপিআইএমের পলিটব্যুরো বলেছে, সিপিআই(এম) সব ধর্মকে সম্মানের চোখে দেখে প্রত্যেকের বিশ্বাসকে সুরক্ষিত রাখার নীতি নিয়ে চলে। পলিটব্যুরো বলেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে ‘আরএসএস’ এবং ‘বিজেপি’ একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। সরাসরি তার মধ্যে যুক্ত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারের বিভিন্ন পদে আসীন ব্যক্তিরা। সুপ্রিম কোর্ট একাধিক সময়ে বলেছে, প্রশাসন পরিচালনার অন্যতম মৌলিক নীতি হলো সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের কোন ধর্মীয় পরিচিতি থাকবে না। এই অনুষ্ঠানে সেই নীতিকে ভাঙা হচ্ছে বলেও সিপিআইএমের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২৮