বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীরাই দেশ চালাচ্ছে: আসাদউদ্দিন ওয়াইসি
ভারতের মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীরাই আজ দেশ চালাচ্ছে। তিনি ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যার ঘটনার চেয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালে ‘জাতীয় লজ্জা’র জন্য যারা দায়ী তারাই আজ দেশ চালাচ্ছেন। মহাত্মা গান্ধীর হত্যার বিচার দু’বছরের মধ্যে শেষ হয়েছিল। কিন্তু তার চেয়েও গুরুতর ঘটনা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিচার এখনো হল না। গান্ধীর হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হয়েছে, ‘পদ্মবিভূষণ’ দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ খুব ধীরে চলছে।’
২০১৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কার দেয়া এল কে আদবানিকে। সেসময় আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আদবানিকে কিভাবে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ দেয়া হল, যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে! তিনি বলেন, ‘আদবানি ‘রথ যাত্রা’ করে দেশের ক্ষতি করেছেন। সম্ভবত এই প্রথম ফৌজদারি মামলায় জড়িত কোনো ব্যক্তিকে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মান দেয়া হয়েছে।’
একই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সর্বোচ্চ বেসামরিক নাগরিক সম্মান ‘ভারত রত্ন’ পুরস্কার দেয়ারও বিরোধিতা করেছিলেন। ওয়াইসি’র অভিযোগ, অটলবিহারী বাজপেয়ী অযোধ্যার ঘটনায় ১৯৯২ সালের ৫ ডিসেম্বর এক ভাষণে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, যার ভিডিও ইউটিউবে আছে।’
বুধবার ওয়াইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ২৪/২৫ বছর পার হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ চলবে। আমার আশা সুপ্রিম কোর্ট আদালত অবমাননার আবেদন সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নেবে।‘
তিনি বলেন, ‘কল্যাণ সিং কী ইস্তফা দিয়ে বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি হবেন? না গভর্নর থাকার সুবাদে পর্দার আড়ালে লুকোবেন? মোদি সরকার কী তাকে সুবিচারের স্বার্থে অপসারণ করবে? এ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় কল্যাণ সিং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বর্তমানে রাজস্থানের গভর্নর পদে রয়েছেন। সাংবিধানিক পদে থাকায় ইস্তফা না দেয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালানো যাবে না। ওয়াইসি তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মনে হয় যদি সুপ্রিম কোর্ট যদি সেসময় করসেবার অনুমতি না দিত তাহলে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হতো না। সুপ্রিম কোর্টের এখনো আদালত অবমাননার শুনানি করা বাকি রয়েছে।
১৯৯২ সালে তৎকালীন উত্তর প্রদেশ সরকার হলফনামা দেয়ার পরে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালের ২৮ নভেম্বর সাঙ্কেতিক করসেবার অনুমতি দেয়। উত্তর প্রদেশ সরকার সেসময় শান্তিপূর্ণ করসেবা করার জন্য হলফনামা দিয়েছিল। এরপরে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিজেপি’র তৎকালীন শীর্ষ নেতাদের উসকানি, ইন্ধন ও উপস্থিতির মধ্যে ‘করসেবক’ নামধারী উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা প্রকাশ্য দিবালোকে হাতুড়ি শাবল, গাইতি চালিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে।
দীর্ঘকাল পরে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট এল কে আদবানি, মুরলী মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়ার, উমাভারতীসহ অভিযুক্ত বিজেপি’র শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দায়ে ফৌজদারী ষড়যন্ত্রের বিচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/২০