ফেসবুকে ইসলামবিদ্বেষী পোস্ট: বেঙ্গালুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৩
(last modified Wed, 12 Aug 2020 05:50:22 GMT )
আগস্ট ১২, ২০২০ ১১:৫০ Asia/Dhaka
  • ফেসবুকে ইসলামবিদ্বেষী পোস্ট: বেঙ্গালুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৩

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলামবিদ্বেষী পোস্টের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে ওই ঘটনা ঘটেছে।

আজ (বুধবার) সকালে বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পন্ত এ ব্যাপারে অবমাননাকর পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে নবীন নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি কংগ্রেস বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির ভাইপো। 

আজ হিন্দি টিভি চ্যানেল ‘এনডিটিভি’র ওয়েবসাইট সূত্রে প্রকাশ, বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির এক আত্মীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক একটি পোস্ট শেয়ার করার পরে বিধায়ক আবাস ও স্থানীয় থানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

গাড়ি ভাঙচুর

পুলিশ জানিয়েছে, প্রচুর সংখ্যায় মানুষজন বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর করে এবং সেখানে থাকা গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পন্ত বলেন, গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারসহ ৬০ পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। আহত একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

এদিকে, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিজে হাল্লি ও কেজি হাল্লি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং গোটা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে ১১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তি ক্ষুব্ধ মুসলিমদের উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে আবেদন করছি যে কিছু দুর্বৃত্তের ভুলের কারণে আমাদের সহিংসতায় লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। ঝগড়া লড়াই করার দরকার নেই। আমরা সবাই ভাই। আমরা আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দেবো। আমরাও আপনাদের সাথে আছি। আমি আমার বন্ধুদের শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন করছি।’

বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তি

গণমাধ্যমে প্রকাশ, বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির এক আত্মীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিজনক পোস্ট শেয়ার করার অভিযোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রচুর মানুষজন স্থানীয় থানার সমানে জড়ো হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের দাবি, এফআইআর করে দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে কারণ ওই ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। এসময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিধায়কের বাড়ির সামনে থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।

গুলিবর্ষণ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার তাঁর সাফাইতে বলেন, পুলিশকর্মীদের উপরে বড় বড় পাথর দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। আচমকা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ভিড় মোকাবিলা করতে আমাদের কিছুটা সময় লেগেছে। যেহেতু চারদিক থেকে থানা আক্রমণ করা হচ্ছিল, সেজন্য পুলিশের কাছে গুলি চালানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।

কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই এক বার্তায় বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা আইনবিরোধী। বিষয়টি যাই হোক না কেন, আইনের আওতার মধ্যেই তা সমাধান করতে হবে। আমি পুলিশকে শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কোনো ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। যে বা যারা এ জন্য দায়ী তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমি আপনাদেরকে আশ্বাস দিচ্ছি যে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।’

কর্ণাটকের আমীর-এ-শরীয়া হযরত মাওলানা সাগীর আহমেদ মুসলিমদের শান্তি বজায় রাখার আবেদন করে বলেন, পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যে ওই আপত্তিজনক কাজ করেছে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি জনগণকে আইন হাতে না নিতে আবেদন জানিয়েছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ